পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬২ বিভূতি-রচনাবলী র্তার লীলাসঙ্গী হয়ে থাকে, মনে মনে সর্বদ তাকে ভক্তি করে ডাকে । তিনিই আলোঁ জালবার কর্তা । করুণাদেবী কি কম উচু স্তরের জীব ? কিন্তু উনি বলেন, আমি মনে-প্ৰাণে মেয়েমানুষ— স্বখদুঃখ স্নেহভালবাসা নিয়ে থাকতে ভালবাসি। র্তার সঙ্গে মিশে যেতে চাই নে, লীলাসহচরী হয়ে থাকি তার স্বষ্টিতে , তাকে ভালবাসি মনেপ্রাণে, তার জীবদের সেবা করি যুগে যুগে। এই আমার তপস্যা। মুক্তি চাইনে । —সত্যি, এমন না হলে আর দেবী ! দেবী কি—সাক্ষাৎ মা ! জগতের করুণাময়ী মা । আমাকে একবার দেখা দিতে বোলে, পায়ের ধূলো নেবো—না ভুল হোলো, ধুলো আর এখানে কোথায় ? তা ছাড়া ওঁদের পায়ে কি ধুলো লাগে । এত উচ্চ জ্ঞান তার এ আমি জানতাম না । –আচ্ছ। আর অত বিচার করতে হবে না তোমায় । আমি বলবো তোমায় দেখা দিতে । ওঁরাই তো দেবী। পৃথিবীতে ওঁদেরই তো মন্দির প্রতিষ্ঠা করে পূজো করা হয়। ওঁরাই দুর্গ, ওঁরাই কালী, ওঁরাই সরস্বতী । নামে কি আসে যায় ? অন্য দেশে হয়তো অন্ত নামে পূজো করে। —এখন কিছু কিছু বুঝচি। আগে এ সব কথাই শুনিনি কখনো পুষ্প-সত্যি বলচি । —সময় না হোলে শুনতেও পায় না কেউ । অবধূত তোমায় কি দেখালেন বলো না ? যতীন বর্ণনা করলে । বর্ণনা করবার সময় তার সমস্ত শরীরে কাট দিয়ে উঠলো। সেই অপূর্ব অনুভূতি ও পুলকের স্থতি এখনও ওর মনে খুব জাগ্রত—তাই বর্ণনা করতে গিয়ে এখনও তার কিছুটা যেন আবার সজাগ হয়ে উঠলে মনে । আবার সেই অতীন্দ্রির জগৎ, যেখানে সংকল্পও নেই, বিকল্পওঁ নেই, মনের পারের সেই অনির্দেশ রাজ্য, ক্ষণকালের জন্যও যার মধ্যে প্রবেশের অধিকার সে পেয়েছিল মহাপুরুষ অবধূতের রূপায়-সে জগতের বর্ণনা মুখে সে কি করে দেবে ? কথা তার জড়িয়ে যেতে লাগলো, ঘন ঘন রোমাঞ্চ হতে লাগলো সে অবস্থার স্মরণে । পুষ্প সব শুনে স্তব্ধ হয়ে বসে রইল । পরে হাত জোড় করে উদ্দেশে প্রণাম করে বল্লে –তার চরণে প্রণাম করে যতীন-দা। বড় ভাগ্যে র্তার সাক্ষাৎ পেয়েচ। সাক্ষাৎ ঈশ্বরের সমান ওঁর। কি পুণ্য না জানি ছিল তোমার। দুজনে পৃথিবীতে নেমে এসেচে । সন্ধ্যার কিছু পরে। যতীন কবি নয়, কিন্তু পৃথিবীর এ সন্ধ্যা, কি যে ভাল লাগলো ওর । পৃথিবীতে বৈশাখ মাসের প্রথম, আম্রনিকুঞ্জের নিভৃত অন্তরালে কোকিলের ডাক, সন্ধ্যা হওয়ায় প্রস্ফুটিত বিৰপুষ্পের ঘন স্ববাস, একটি জামগাছে কচি সবুজ থোলো থোলো জাম ধরেচে, রাঘবপুরের হাট সেরে হাটুরে গোরুর গাড়ীর সারি চুয়াডাঙার কাচা সড়ক ধরে চলচে আমকাঠাল বাগানের তলায় তলায়, মাঠে মাঠে আউশ ধানের ক্ষেতে সবুজ ধানের জাওলা । আশাদের পুকুরের ধারের তেঁতুল গাছের তলায় ওরা বসলো। যতীনের মনে হোল, কি স্বন্দর পৃথিবীর বসন্ত ! সেই বহুপরিচিত প্রিয় পৃথিবী, কত দুঃখ-মুখ, আশা-আনন্দের স্মৃতিতে ভর। সে পৃথিবী ছেড়ে চলে গিয়ে ভাল আছে কি মন্দ আছে জানে না, কিন্তু পৃথিবীতে এলেই মন সরে না এখান থেকে যেতে। এই বৈশাখে কচি আমের ঝোল, বেলের পান, ঐ