পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/১৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দম্পতি ኣ8ፃ ঢবঢবির কাছারিবাড়ীতে। কেমন একটু ভয়-ভয় হইল। ডাকিলেন—মানিক, ও মানিক” মানিক সম্ভবতঃ গভীর নিত্রায় মগ্ন। সাড়া পাওয়া গেল না। গদাধর আবার ঘুমাইয়া পড়িলেন। ভোর হইলে গদাধর উঠিয়া হাতমুখ ধুইয়। কাছারিতে বসিলেন। প্রজাপত্র আসিতে আরম্ভ করিল। কেহ একটা পাঠা, কেহ-ব। গোটাকতক ডিম, কেহ বড় একটা লাউ প্রভৃতি আনিয়াছে জমিদারবাবুকে ভেট্ দিতে—নানাবিধ জিনিসপত্রে কাছারি-ঘর ভরিয়া গেল—তার মধ্যে তরি-তরকারিই বেশি। বেলা এগারোটার মধ্যে প্রায় সাতশত টাকা আদায় হইল। গাঙ্গুলিমশায় বলিলেন–বাৰু আপনি এসেছেন বলে এই আদায়টা হলো। নইলে এ টাকা আদায় হতে একমাস লাগতো । আপনাদের নামে যা হবে, আমার হাজার-বার তাগাদাতেও তা হবে না। —আজ বাড়ী ফিরতে পারি তো ? —আরও ক'দিন থাকুন। হাজার-তিনে? টাকা এবার আদায় হয়ে যাবে। প্রজার অবস্থা এবার ভালো । গদাধর প্রমাদ গণিলেন। একটা রাত যে-কষ্টে কাটাইয়াছেন প্রবাসে, আরও কয়েক রাত কাটাইতে হইলেই তো তিনি গিয়াছেন। এমন ঘরে বেশি দিন বাস করা যায় ? বিশেষ এই শীতকালে ? গদাধরের পিতাঠাকুর বৎসরে দু'বার করিয়া এখানে তাগাদায় আসিতেন— তিনি এই বছর-পাঁচেক পরলোকগত হইয়াছেন—ইহার মধ্যে গদাধর আসিয়াছেন বছর-দুই পূর্বে একবার, আর একবার এই এখন। গোমস্ত পত্র লিখিয়া আসিতে পীড়াপীড়ি না করিলে তিনি বড়-একটা এখানে আসিতে চাহেন না । আরামে মানুষ হইয়াছেন, এমন ধরণের কষ্ট তাহার সহ হয় না ! 哆 আরও তিন দিন কাটাইয়া প্রায় দেড় হাজার টাকা আদায় হইল। গাঙ্গুলি-মশায় খুব খুশী । কাছারিতে একদিন ভোজের বন্দোবস্ত করিলেন। মাতব্বর প্রজারা জমিদারের নিমন্ত্রণে কাছারিবাড়ী আসিয়া পাত পাড়িয়া খাইয়া গেল। গদাধর নিজে দাড়াইয়া থাকিয়া তাহাদের খাওয়ানোর তদারক করিতে লাগিলেন। সব মিটিয়া গেলে গদাধর'গাঙ্গুলি-মশায়কে ডাকিয়া বলিলেন—তাহলে আমার যাওয়ার বন্দোবস্ত করুন এবার | —আজ হয় না বাবু, আজ রাত্রে আমার বাড়ী সত্যনারায়ণ পূজো—আপনাকে একবার সেখানে যেতে হবে । —বেশ, তবে কাল সকালেই গাড়ীর ব্যবস্থা রাখবেন । - —কাল আপনি যাবেন, সঙ্গে আমিও যাবো। অতগুলো টাকা নিয়ে আপনাকে একলা যেতে দেবে না, বাবু। সন্ধ্যার পরে গাঙ্গুলি-মশায়ের বাড়ী বেশ-সমারোহের সহিত সত্যনারায়ণের পূজা হইল।