পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

अ?थ छण á —চিরকাল হয়ে আসচে। ওসব দেখেও দেখতে নেই। নিজের নিয়ে থাকে, পরের দোষ দেখে কি হবে? ভগবান আমাদের যথেষ্ট দিয়েচেন—সবাই মানে চেনে ভয় করে গায়ের মধ্যে। সত্যি কথা বলি তবে, শাস্তি ঠাকুরবি কাল আমার কাছে এসেছিল। এসে আমার হাত ধরলে । বললে, এই রকম একটা কথা আমার নামে দাদার কাছে ওঠাবে লোকে, আমার ভয়ে গা কাপচে। তুমি একটু দাদাকে বোলো বৌদি। বেচারী তোমার কাছে নালিশ হবে শুনে— —ওসব কথার মধ্যে তুমি থেকে না। সমাজের ব্যাপার, গ্রামের ব্যাপার-এ অন্য চোখে দেখতে হয়। শাসন না করে দিলে চলে না—বেড়ে যাবে। পরদিন গ্রামের পল্লীমঙ্গল সমিতির সভ্যদের ডাকাই। শাস্তির ব্যাপারটা সম্বন্ধে পরামর্শ করবার জন্তে । পরামর্শ করবার প্রয়োজন নেই আমি জানি। এ সমিতির আমিই সব, আমার কথার ওপর কেউ কথা বলবার লোক নেই এই গায়ে। আমিই সমিতির সেক্রেটারী, আমিই সভাপতি—আমিই সব । সভায় আমি নিজেই প্রস্তাব করলাম, রামপ্রসাদ চাটুয্যেকে ডাকিয়ে এনে শাসন করে দেওয়া যাক। সকলে বললে—তুমি যা ভাল মনে করে। সনাতনদী বললে—রামপ্রসাদ ইউনিয়ান বোর্ডের টেক্স আদায়কারী বলে ওর বডড বাড় বেড়েছে। লোকের যেন হাতে মাথা কাটছে—আরে, সেদিন আমি বললাম, আমার হাত খালি, এখন টেক্সট দিতে পারচি নে, দুদিন রয়ে সয়ে নাও দাদা। এই বলে, তোমার নামে ক্রোকী পরওয়ানা বের করবো, হেন করবো, তেন করবো— আমি বললাম—ও সব কথা এখানে কেন ? ব্যক্তিগত কোনো কথা এখানে না ওঠানোই ভাল। তুমি টেক্স দাও নি, সে যখন আদায়কারী, তখন তোমাকে বলবে না কি ছেড়ে দেবে ? # - শতু সরকার বললে—সে তো ন্যায্য কথা । আমি বললাম—শাসন করবো একটু ভাল করেই। কাল দারোগা আমার এখানে আগচে, দারোগীবাবুকে দিয়েই কথাটা বলাই । তাহোলে ভয় খেয়ে যাবে এখন । সভা থেকে ফিরবার পথে মুখুয্যে পাড়ার মোড়ে কাটালতলায় দেখি কে একটি মেয়ে দাড়িয়ে, বোধ হয় আমার জন্যে অপেক্ষা করচে । আমি গাছতলীয় পৌছতেই মেয়েটি হঠাৎ আমায় পায়ে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো। শশব্যন্তে বলে উঠলাম—কে ? কি হয়েচে, ছাড়ে ছাড়ো, পায়ে হাত দেয় যে— ততক্ষণে চিনেচি, মেয়েটি শাস্তি । শাস্তি লালমোহন চক্রবর্তীর মেজমেয়ে। বছর বাইশ-তেইশ বয়েস, আমার চেয়ে অন্তত বারো-তেরো বছরের ছোট, আমাকে পাড়াগা হিসাবে দাদা বলে ডাকে ।