পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/১৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দৃষ্টি-প্রদীপ ১২৯ ফাগুন মাস পড়ে গেল। গানাপুরের হাটে আমি কাজে বেরিয়েছি গরুর গাড়ি করে। মাইল-বারো দূর হবে, বেগুন পটলের বাজরার ওপরে চটের থলে পেতে নিয়ে আমি আর তন্থ চৌধুরী বসে। তনু চৌধুরীর বাড়ি নদীয়া মেহেরপুরে, এখানকার বাজারের সাহেবের পাটের গদির গোমস্ত গাংনাপুরে খরিদ্দারের কাছে মাল দেখাতে যাচ্ছে। গল্প করতে করতে তন্থ চৌধুরী ঘুমিয়ে পড়ল বাজরার উপরেই। আমি চুপ করে বসে আছি। পথের ধারে গাছে গাছে কচি পাতা গজিয়েছে, ঘেটুফুলের ঝাড় পথের পাশে মাঠের মধ্যে সৰ্ব্বত্র । শেষরাত্রে বেরিয়েছিলুম, ভোর হবার দেরি নেই, কি সুন্দর বিরঝিরে ভোরের হাওয়া, পূব আকাশে জলজলে বৃশ্চিক রাশির নক্ষত্রগুলো বঁাশরনের মাথায় ঝুকে পড়েছে—যেন ওই ছাতিমান তারার মণ্ডলী পৃথিবীর সকল মুখদু:খের বাস্তবতার বন্ধনের সঙ্গে উদ্ধ আকাশের সীমাহীন উদার মুক্তির একটা যোগ-সেতু নিৰ্ম্মাণ করেছে—যেন আমাদের জীবনের ভারক্লিষ্ট যাত্রাপথের সংকীর্ণ পরিসরের প্রতি নক্ষত্র-জগৎ দয়াপরবশ হয়ে জ্যোতির দূত পাঠিয়েছে আমাদের আশার বাণী শোনাতে—যে কেউ উচু দিকে চেয়ে দেখবে চলতে চলতে, সে-ই দেখতে পাবে তার শাশ্বত মৃত্যুহীন রূপ। যে চিনবে, যে বলবে আমার সঙ্গে তোমার আধ্যাত্মিক যোগ আছে—আমি জানি আমি বিশ্বের সকল সম্পদের, সকল সৌন্দর্য্যের, সকল কল্যাণের উত্তরাধিকারী—তার কাছেই ওর বাণী সার্থকতা লাভ করবে। এই প্রস্ফুট বন-কুসুম-গন্ধ আমার মনে মাঝে মাঝে কেমন একটা বেদন জাগায়, যেন কি পেয়েছিলুম, হারিয়ে ফেলেছি। এই উদীয়মান স্বৰ্য্যের অরুণ রাগ অতীত দিনের কত কথা মনে এনে দেয় । সব সময় আমি সে-সব কথা মনে স্থান দিতে রাজী হই নে, অতীতকে আঁকড়ে ধরে বসে থাকা আমার রীতি নয়। তাতে দুঃখ বাড়ে বই কমে না। হঠাৎ দেখি অন্যমনস্ক হয়ে কখন ভাবছি, দ্বারবাসিনীর আখড়া থেকে সেই ভোরে যে আমি চুপি চুপি পালিয়ে এসেছিলাম —কাউকে না জানিয়ে, মালতীকে তো একবার জানালে পারতাম—মালতীর ওপর এতটা নিষ্ঠুর আমি হয়েছিলুম কেমন করে ! ওকথা চেপে যাই—মন থেকে ঝেড়ে ফেলবার চেষ্টা করি । আগে যতটা কষ্ট হ’ত এসব চিন্তায়—এখন আর ততটা হয় না, এটা বেশ বুঝতে পারি। মালতীকে ভুলে যেতে থাকি —কিছুদিন পরে আরও যাব। এক সময়ে যে এত কাছে এসে দাড়িয়েছিল সে আজ সপ্তসিন্ধুপারের দেশের রাজকন্যার মত অবাস্তব হরে আসছে। হয়ত একদিন একেবারেই ভুলে যাব। জীবন চলে নিজের পথে নিজের মজ্জিমত—কারও জন্যে সে অপেক্ষা করে না । মাঝে মাঝে মনে আনন্দ আসে-যখন ভাবি বহুদিন আগে রাঢ়ের বননীল-দিথলয়ে-ঘেরা মাঠের মধ্যে যে দেবতার স্বপ্ন দেখেছিলুম তিনি আমায় ভুলে যান নি। তারই সন্ধানে বেরিয়েছিলাম, তিনি পথও দেখিয়েছিলেন । এই অনুদার রুদ্ধগতি জীবনেও তিনি আমার মনে আনন্দের বাণী পাঠিয়েছেন । এতেও ঠিক বলা হ’ল না । সে আনন্দ যখন আসে তখন আমি নিজেকে হারিয়ে ফেলি, তখন কি করি, কি বলি কিছু জ্ঞান থাকে না—সে এক অন্ত ব্যাপার। আজও ঠিক তাই হ’ল। আমি হঠাৎ পথের ধারে একটা ঝোপের ছায়ার নেমে পড়লুম গাড়ি থেকে। তন্থ চৌধুরী বললে—ও কি, উঠে এস। তন্থ চৌধুরী জানে না আমার কি হয় মনের মধ্যে এসব সময়ে, কারও সাহচৰ্য্য এসব সময়ে আমার অসহ হয়, কারও কথার কান দিতে পারি নে— আমার সকল ইন্দ্রিয় একটা অনুভূতির কেন্ত্রে আবদ্ধ হয়ে পড়ে—একবার চাই শালিখের ছান बि. 颈。8一》 毫