পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/১৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

किन्नन्न लकँ • ›ዓ> বন্ধুপত্নী কৃত্রিম ভংসনার স্বরে বলিলেন—এর মধ্যে ঠাট্টার কথা কি আছে ? না, ও হবে না। এই ফাল্গুন মাসের মধ্যেই বিয়ে করুন—সব ঠিক ক’রে ফেলি । এ ধরণের কথা খোসগল্প হিসাবেই শুনিয়া থাকি, এতই অভ্যস্ত হইয়া পড়িয়াছি এ ধরণের কথায়। কাজেই যখন কলিকাতায় চলিয়া আসিলাম তখন বেমালুম সকল কথাই মনের মধ্যে কোথায় তলাইয়া গেল কাজের ছড়াছড়িতে। বছর পার হইতেই জীবন অন্য পথে চলিল । পূর্বের ব্যবসা ছাড়িয়া দিয়া অন্ত ব্যবসা খুলিলাম কলিকাতায় । সুতরাং জগন্নাথপুরের হাটে গুড় কিনিতে আর যাই না । ইতিমধ্যে বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজনের অনুরোধে বিবাহও করিলাম। মেয়েটি পাইয়াছি ভালই, ভবানীপুর অঞ্চলে বাপের-বাড়ি, লেখাপড়া জানে, সুন্দরীও বটে। কিন্তু সবচেয়ে বড় গুণ—চমৎকার গান গায় । বিবাহের পরও দেড় বছর কাটিয়া গিয়াছে। গত মাঘ মাসের কথা, এক দিন ভবানীপুরে শ্বশুরবাড়ি হইতেই ফিরিতেছি । বৈকাল গড়াইয়া গিয়াছে, সন্ধ্যা হয়-হয়। পশ্চিম আকাশ লাল হইয়া উঠিয়াছে, ফোর্টের বেতারের মাস্তলে লাল আলো জলিয়াছে। বৈদ্যুতিক সংবাদপত্রের উজ্জল অক্ষরে জানাইরা দিল যে আবিসিনিয়ার সম্রাট লীগ অব নেশন্সে পুনয়ার দরখাস্ত পেশ করিয়াছেন এবং মোহনবাগান হকি না ক্রিকেট খেলিতে বোম্বে যাইতেছে। চৌরঙ্গীর মোড়ে বাস হইতে নামিতেই নজর পড়িল আমার সেই দিয়াখালির বন্ধুটি সস্ত্রীক দাড়াইয়া রহিয়াছে, সম্ভবত: বাসের প্রত্যাশায়। খুশীর সহিত আগাইয়া গেলাম । —আরে, তুমি কলকাতায় যে ? কবে এলে ? এই যে নমস্কার, ভাল আছেন ? অনেক দিন দেখাসাক্ষাৎ হয় নি—চিনতে পারেন ? বন্ধুপত্নী বলিলেন–চিনতে কেন পারব না ? আপনি ডুমুয়ের ফুল হয়ে গেলেন তার পর থেকে । আপনার সঙ্গে আর কথা বলব না । বন্ধুপত্নীকে মিষ্ট কথায় ঠাণ্ডা করিলাম। বন্ধুটির মুখে শুনিলাম তাহার ছোট শালী চিত্তরঞ্জন-সেবাসদনে চিকিৎসার জন্ত আসিয়াছে আজ দিন পনর হইল—মধ্যে অবস্থা খারাপ হওয়াতে পত্র পাইয়া বন্ধুটি সস্ত্রীক শালীকে দেখিতে আসিয়া শু্যামবাজারে এক আত্মীয়বাড়ি উঠিয়াছে। এখন চিত্তরঞ্জন-সেবাসদন হইতেই ফিরিতেছে। মেট্রোয় বায়োস্কোপ দেখিবে বলিয়া এখানে নামিয়া পড়িয়াছে। বন্ধু বলিল—চল না হে, তুমিও চল । এ তে কখনো ওসব দেখতে পায় না, তাই ভাবলাম ফিরবার পথে মেট্রোতে একবার ঘুরিয়ে নিয়ে যাব । আর এদিকে শালীটি তো সেয়ে উঠেছে, কাজেই মনও ভাল। এস আমাদের সঙ্গে । অনুরোধ এড়াইতে না পারিয়া গেলাম মেট্রোতে। কয় বছর যাই নাই, বন্ধু ও বন্ধুপত্নী সেজন্য যথেষ্ট অনুযোগ করিলেন । কথায় কথায় বন্ধুপত্নী বলিলেন—বিয়ে করেছেন আপনি ? কথার কি উত্তর দিব ভাবিতে ন-ভাবিতেই তিনি বলিলেন—করেন নি তা বেশ বুঝতে পারছি । উনিও বলেন, সে বিয়ে করলে কি আর আমাদের একখানা নেমস্তন্ন-পত্রও দিত না 7.করেন নি—না ? এ-কথার পরে বিবাহ করিয়াছি কথাটা হঠাৎ বলা চলে না। সুতরাং তখনকার মত অর্থবিহীন হাসি হাসিয়া চুপ করিয়া রছিলাম। তবে হাসিটি যত দূর সম্ভব দ্ব্যর্থঙ্কচক করিবার চেষ্টা করিয়াছিলাম মনে আছে। ইন্টারভ্যাল হইল। বন্ধুটি পান কিনিবার জন্ত বাহিরে গেল ।