পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/২৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৩৬ বিভূতি-রচনাবলী কি আছে ঘরে ? ডাক্তারই বা কোথায় ? এক আছে স্বরেন ডাক্তার। দ্য টাকার কম এ রাত্রে আসবে না। মেয়ের গায়ে হাত দিয়ে দেখে বল্লে—যেমন তুমি তেমনি হয়েছে আমার অবস্থা । কি যে করি— রাত্রে বডড জরটা বাড়তে সে চেচিয়ে ডাক দিলে প্রকাশ গাঙ্গুলীর স্ত্রীকে—ও জ্যাঠাইমা— জ্যাঠাইমা—ইদিকে একবার আমুন, খুকীর বডড জর— প্রকাশ গাঙ্গুলীর স্ত্রী চোখ মুছতে মুছতে উঠে এলেন ঘুম থেকে। অনেক রাত। দেখে বল্লেন—তাই তো, বড় জরটা বেড়েছে। কুইলেনের বড়ি আছে আমার কাছে । কাল সকালে খাইয়ে দিও— —দেখুন তো জ্যাঠাইম, গরীবের ঘরে কি কাও— —তাই তে বাপু । সবই আদেষ্ট তোমার । তোমার বাবা ভালো দেখেই বিয়ে দিয়েছিলেন । দোজবরে তাই কি? দিব্যি চেহারা । কলকাতায় বাসা। ইনজিনিয়ার লোক । ছু পয়সা আয় ছিলো, সইলো না তোকি হবে! অল্প বয়সে কপাল পুড়লো । —সে তো একশোবার জ্যাঠাইমা। নইলে খুকীকে আজ দুটো পেট ভরে ভাত দিতে পারি নে! এ কি কম দুঃখু! পরের বাড়ি দাসীবৃত্তি, তাতে আমার এ গায়ে অপমান নেই। এ গায়ের মেয়ে যখন আমি । বলুন—ঠিক কি না ? —সে কথা তো বটেই মা । তার আর কি হবে বলে । সবই আদেষ্ট । আমি গিয়ে কুইলেনের বড়ি নিয়ে আসচি— —এখন দরকার নেই জ্যাঠাইমা, কাল সকালে পাঠাবেন । —ম, রাতটা আজ এখানেই থাকবো ? —ন জ্যাঠাইমা । আমি বেশ থাকবে এখন । আপনি মায়ের মত, তাই কথাটা বল্লেন । এ গায়ে ও কথাও কেউ বলবে না । ননীবালা সত্যিই পরের বাড়ি ঝি-গিরি করে মাসে পাঁচ টাকা অার একবেলা ভাত পায় এক থালা । ভাত সে বাড়ি নিয়ে আসে। যে বাড়িতে কাজ করে, তারা ভাত দিতে কৃপণতা করে না, বড় বড় ধানের গোলা তাদের বাড়িতে পাচ-সাতট, বাগান, পুকুর, জমিজমা সব আছে । মা আর মেয়ে সেই এক থালা ভাত খায় । ননীবালার বিয়ে হয়েছিল কলকাতার এক বড় ইনজিনিয়ারের সঙ্গে । দোজবরে পাত্র হোলে কি হবে, বেশ ছিলেন তিনি দেখতে শুনতে। বয়েসটা একটু বেশী ছিল, ননীবালা গিয়ে দেখেছিল তার বয়সের দুটি সৎমেয়ে আছে তার। সৎমেয়ে দুটি কোথায় থেকে পড়তে, বাড়িতে আসতে খুব কম। মাত্র দু বছর স্বামীর সঙ্গে সে তেতলার বাসায় কাটিয়েছিল পরম মুখে, এর মধ্যে বারকয়েক দেখা হয়েছিল সংমেয়ে দুটির সঙ্গে । বড় মেয়েটির বিয়ের সব ঠিকঠাক। সে সময়েই স্বামীর অসুখ করলো। বিয়েও হ’ল, মাসখানেকের মধ্যেই স্বামী মারা গেলেন । তারপর বড় মেয়ের স্বামী ছোট মেয়েটিকেও নিয়ে গেল মুদূর পশ্চিমে তার কৰ্ম্মস্থলে । n সৎশাশুড়ী এক বাসায় । ননীকে কেউ বল্পেও না সে কি করবে, কোথায় যাবে, কি খাবে। সরবালা তখন এক বছরের শিশু । - দরজায় এসে ট্যাক্সি দাড়িয়েছে, বড় সৎমেয়ে সুললিত তার ছোট বোন সীমাকে নিয়ে উঠছে মোটরে স্বামীর সঙ্গে । ননীবালা দরজায় দাড়িয়ে দেখছে।