পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/২৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিভূতি-রচনাবলী ہرا\& সাধ হোল। মিস্টার সর্দার সিংও রাজী হলেন । আর দেরি নয়—দুজনে বেল তিনটার ট্রেনে ঘাটশীলা ছেড়ে চক্ৰধরপুরে এলুম। রেস্তোরায় চা থেয়ে দুজনে চললুম হরদয়াল সিং-এর বাড়ি—সেখানে রাত্রে খাওয়া-দাওয়া সেরে রেস্তোরাতে গিয়ে দুজনের রাত্রিযাপন । সকালে হরদয়াল সিং-এর বাড়ি থেকে এলো ক্ষেত থেকে সদ্য তোলা মূলো—চায়ের সঙ্গে সেই মূলো থেয়ে দুজনে মোটরে করে বেরিয়ে পড়লুম। ভগবানের অসীম দয়া—তাই এমন সব বন্ধু পেয়েচি। না হলে এমন আরমে আমাকে জঙ্গলে নিয়ে যেতো কে ? এলুম চাইবাসায় । চাইবাসা জায়গাটি বেশ পরিষ্কার এবং স্বাস্থ্যকর । এখানে একটি হ্রদ আছে। তেমন বড় না হোলেও ভারি মুন্দর । উচু-নীচু পথ–চমৎকার বাধানে। পথের একদিকে পাহাড়ের শ্ৰেণী, আর একদিকে টানা জঙ্গল । সরকারী ফরেস্ট। এ জঙ্গলে ছোটখাটাে জীবজন্তু আছে। পথে সঞ্জয় নদী। নদীর উপর প্রকাণ্ড পুল। পার হয়ে জঙ্গলের পথে ষোল মাইল আসবার পর শলাই বাংলো। দু-বছর আগে এখানে এসেছিলুম। বাবলুর মা রান্না করে থাইয়েছিলেন । সেকথা মনে পড়লো । পাশে ছোট গ্রাম । গ্রামের নাম বাকৈলা । বাকৈলায় হস্তায় দু-দিন হাট বসে—নানা জিনিস বিক্রি হয় । এ হাটে বাবলুর মা একখানি চাদর কিনেছিলেন—এখানকার তৈরী চাদর। জঙ্গলের দৃশ্ব এখানে অদ্ভুত—অপরূপ সৌন্দৰ্য্য। নিস্তব্ধ বনভূমি—যেন সৌন্দর্ঘ্যের পশরা উন্মুক্ত করে রেখেছে। যাকে বলে ভীমকান্তি দৃশু । বাকৈলায় পৌছুলুম বেলা তখন একটা। ইন্‌পেকশন বাংলো আছে। সেখানে উঠলুম। সঙ্গে খাবার-দাবার ছিল—থেয়ে একটু বিশ্রাম করে মিস্টার সিং-এর সঙ্গে বেরুলুম জঙ্গল দেখতে। বহুদূর চলে গেলুম। ক্রমে সন্ধ্যা হলো—চারদিক নিঝুম-নিস্তব্ধ। আকাশে একটুখানি চাঁদ গাছপালার আড়ালে কোথায় লুকিয়ে আছে, দেখা যায় না। পৃথিবীর মাথার উপর আকাশ যেন নীল চাঁদোয়া খাটিয়ে দিয়েছে—আকাশের গায়ে অপূৰ্ব্ব নক্ষত্ৰশ্রেণী ! মনে হচ্ছিল—যেন আকাশে দেওয়ালির দীপ জলছে জলজল করে। অপূৰ্ব্ব আনন্দ উপলব্ধি কয়েছিলুম। মনে হচ্ছিল, ভগবানের কি মহাশিল্প এই পৃথিবী ! বাবলুর কথা মনে হোল— তার যেন চোখ খোলে । সে যেন ভগবানের এ শিল্প চোথে দেখতে পায় । বাংলোয় ফিরলুম খানিক রাত্রে। পরের দিন সকাল আটটায় আবার বেরুলাম জঙ্গলের পথে । দুধারে কি ঘন জঙ্গল—আর গাছে গাছে কত রকমের লতাপাতা ! গাছপালার আড়ালে ওদিকটা যেন লুকোনো আছে। পথ-চলা পথিক পথে যেতে যেতে জঙ্গলের সব ঐশ্বৰ্য্য দেখে যাবে, সে উপায় নেই। সে ঐশ্বৰ্য্য পুরোপুরি দেখতে হলে পথ ছেড়ে জঙ্গলে ঢুকতে হবে । কত রকমের গাছ—কত রকমের ফুল ! দেবকাঞ্চন ফুল ফুটে আছে-পিটুনিয়া ফুটেচে । নভেম্বর মাস—জায়গাটা আশ্চৰ্য্যরকম ঠাণ্ডা। করম, কভিলা, শাল, পিয়াশাল প্রভৃতি গাছ-গাছড়া, বুনো কলা আর বুনো বঁাশ গাছ প্রচুর। দেখতে দেখতে কুরো নদীর ধারে এসে বসলুম। এখান থেকে সাত মাইল দূরে একটা স্টেশন। খানিকক্ষণ বসবার পর মোটয়ে চড়ে খাজুড়িয়া হয়ে একটা গ্রামে এলুম। গ্রামে হো-দের বাস—সকলেই খৃষ্টান । মেয়েদের মাথায় লাল ফিত বাধা—সকলেই কাজকৰ্ম্ম করচে। এখানে এক পাজী আছেন, তার নাম ধনকুমার হে। তার সঙ্গে খানিক আলাপ করে বাংলোয় ফিরলুম, বেলা তখন একটা। স্নানাহার সেমে শুয়ে পড়লুম। শোবামাত্র নিদ্রা। ঘুম ভাঙলে উঠে দেখি, বেলা পড়ে এসেচে। বারান্দায় বেরিয়ে এলুম। বারানায় সামান্ত ಗ್ಯ পড়েচে । সামনে পাহাড়ের শ্রেণী—সে-সব পাহাড়ের গায়ে রাঙা রোদ ৷ বসে বই