পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/২৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রূপহলুদ ૨૭૪ পড়তে লাগলুম—“রেজার্স এজ” । পড়তে পড়তে সন্ধ্যার অন্ধকার ঘনিয়ে চারিদিক বেশ ঠাণ্ড হয়ে এলো। তখন ঘরে এলুম। ঘরে আগুন জালা হয়েচে—আগুনের পাশে বসে আবার বই পড়া। প্রেমচাঁদের গল্পের বই । বই শেষ করে খাওয়া-দাওয়া । তারপর অনেক রাত্রে ঘরের বাইরে বারান্দায় এসে দেখি বনের কি শোভা ! তাকাশে অসংখ্য তারা জলজল করছে। তারার ঝিকিমিকি আলোয় নিস্তব্ধ বনভূমি দেখাচ্চে যেন স্বপ্ন দিয়ে ঘেরা। আর কোন কথা নয়। মন কেবলি বলে ভগবানের কি অপূৰ্ব্ব স্বষ্টি ! বিকেলে মিস্টার সিং-এর সঙ্গে গৈলকের গ্রামে বেড়াতে বেরুলুম। ঘুরে ঘুরে সব দেখে গ্রামের পিছনে একটা ডুংরীর উপরে উঠে বসলুম—স্বৰ্য্য তখন অন্ত যাচ্চে—কি চমৎকার দেখাচ্ছিল ! এমনি মুন্দর জায়গা আর এমনি মুন্দর দৃশ্বের ছবি কত কল্পনা করেচি, কিন্তু কল্পনায় এ দৃশ্ব কোনোদিন ধরতে পারিনি—ভগবান আজ সে ছবি চোখের সামনে ফুটিয়ে তুললেন। ডুংরীতে বসেই বাড়িতে চিঠি লিখলুম। আকাশে অগণ্য নক্ষত্ৰ—শাল বনস্পতির মাথায় অনেক রাত্রেও জলজল করচে অগণিত তারা । সেই শালবনে বসে ভগবানের এই অপূৰ্ব্ব বিশ্ব-স্বষ্টি দেখে মনে মনে কেবলি বলতে লাগলুম, বাবলু বড় হয়ে যেন এ শিল্প দেখে—দেখে উপভোগ করে । পরের দিন খাওয়া-দাওয়া সেরে মোটরে চড়ে পাণ্ট বাংলোর উদ্দেশে যাত্রা। পথে সরকারী ফরেস্ট—দু'তিনটে বাংলোও দেখা যায় । কি ঘন জঙ্গল ! ছোটনাগপুরে বহু জঙ্গল দেখেচি —কিন্তু গৈলকেরার মত এমন ভীষণ জঙ্গল আর কোথাও দেখিনি। জঙ্গলে প্রচুর শালগাছ –জঙ্গলে কাঠুরের আসে কাঠ কাটতে। বাঘের কবলে অনেকে মারা যায়। এখান থেকে চার মাইল দূরে সারেন্দা-টানেল। শুনলুম, বিশ-পচিশ বছর আগে সেখানে এক প্রকাও বুনো হাতীর সঙ্গে বি-এন-রেলওয়ের একখানা চলন্ত ট্রেনের সংঘর্ষ হয়—হাতীটাই জখম হয়ে শেষে মারা যায় । যেতে যেতে জঙ্গলের প্রান্তে কাঠবোঝাই কথান গোরুর গাড়ি দেখলুম। সার চলেচে । আরো খানিক এগিয়ে দেখি, পথের ধায়ে তিনটি ময়ূর-বন থেকে বেরিয়ে পথে এসেচে। আমাদের দেখে, চলন্ত মোটর দেখে তারা সরে গেল না। এমন নির্ভয় ! পথে কারো নদী পার হলুম—তারপর কোইন পার হয়ে শলাই-বাঙলোয় পৌছুলুম। খানিকটা বিশ্রাম করে চা-টা খেয়ে সন্ধ্যা নাগাদ বেড়াতে বেরুলুম । এক জায়গায় একটা নীলা । নালার উপর রেলওয়ে-ব্রিজ । ছোট লাইন—কোন মাইনিং ফর্ম আচে, তাদের প্রাইভেট লাইন । লাইনে দুজনে বসলুম—কি চমৎকার দৃষ্ঠ ! দুধারে পাহাড়—বন-জঙ্গলে আগাগোড়া ঢাকা লাইন থেকে অনেক উচু পৰ্য্যস্ত—লাইনকে যেন উচু পাচিলের মত ঘিরে রেখেচে । জঙ্গলের গাছে গাছে পাতায় পাতায় জোনাকি জলচে—আকাশে অসংখ্য নক্ষত্র-চাদ । ভগবানের উদ্দেশে দুজনে প্রাণের প্রার্থনা নিবেদন করলুম। রাত্রি বাড়চে দেখে মিস্টার সিং বল্লেন—এবার ওঠা যাক। আমার উঠতে ইচ্ছা হয় না। আমি বন্ধু—এইখানে পড়ে থাকা যাক সারা রাত। মিস্টার সিং বল্লেন—সৰ্ব্বনাশ! ঐ জঙ্গলে আছে কত বুনো হাতী, হায়েনা আর বাঘ—নরখাদক বাঘ। তিন-চার দিন হলে, মাইনিং কোম্পানির তিনজন কুলি এখানে কাজ করছিল—তাদের—তিনজনকেই বাঘে নিয়ে গেচে । কদিন তাই কাজ বন্ধ আচে । শুনে গা ছমছম করে উঠলো।—থাকতে ভরসা হলো না। নদীর ধার দিয়ে চলে আসছিলুম—মিস্টার সিং দেখালেন, নদী-কিনারায় ভিজা বালিতে হাতীর পায়ের দাগ—হায়েনার পায়ের দাগ। মনটা খারাপ হয়ে গেল । ཨཁ༢༩ཀ་༈ཨཁད།།