পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/২৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

९१९ বিভূতি-রচনাবলী আনচেন । সৰ্ব্বদা চেষ্টা অতিথিদের কি করে খুশী করবেন, কি করে ভালো খাওয়াবেন। এরাও জানে দত্তমশায়ের হোটেলে যতদিন ইচ্ছে থাকে, কেউ বারণ করবার নেই। আমার কষ্ট হোত দীপু বেচারীর জন্তে । হোটেলের রাধুনী তো আর দ্বিতীয় নেই। দুবেলা রান্না, তাও কি সোজা রান্না, হরেক রকমের রান্না, গরমজল, কাপড়ে সাবান দেওয়া, সর্দিকাশির পাচন জাল দেওয়া—সব ঐ বেচারীর ঘাড়ে । —ওরে দীপু, সরকার মশায়ের বডড সন্দি হয়েচে, একটু পাচন করে দিস তো। দীপু অমনি বেরুলো গুলঞ্চের লতা আর বাসক ছাল যোগাড় করতে। একদিন দেখি বকৃচেন মেয়েকে । —তোর একটু ছশ করে চলা উচিত। কাল বিশ্বেস মশায়কে মশারি টাঙিয়ে দিলি—তা দেথলিনে কোথায় ছেড়া, তিনি সারারাত ঘুমুতে পারেননি মশার উপদ্রবে। কেন, দেখে তখনই একটু সেলাই করে দিলেই মিটে যায়। তোর স্থশ বড় কয়— মনে মনে ভাবলাম, ওর হশ যদি কম হোত তবে আপনার এ অবরিত-দ্বার হোটেল কোনকালে দরজা বন্ধ" করে লালবাতি জালতো । কি রত্ন পেয়েছেন ঘরে, তা ভালো করে চোখ চেয়ে দেখুন। একদিন দেখি, বাড়ির সামনের জঙ্গলের মধ্যে দীপু কি করচে। বেলা পড়ে গিয়েচে, সন্দে হয়-হয়, বল্লম—কি ওখানে দীপু ? —কচুর ভাট কাটবো। —এখন কেন ? —ওনারা কাল কচুর শাক থাবেন বাবা বল্লেন। তাই এখন তুলে ধুয়ে রাত্রে কুটে রেখে দি। সকালে সময় পাবো না । —এখন অবেলায় ওখানে না যাওয়াই ভালো । সাপ বেরুতে পারে । —এখন না তুল্পে তুলবো কখন ? কাল সময় পাবো না। আজ সারাদিনের মধ্যে এখন একটু যা সময় পেলাম। —দত্তমশায় কোথায় ? —তিনি ইলিশ মাছ আনতে গিয়েচেন পাচঘরার হাটে। কাল কচুর শাক দিয়ে রান্না হবে কিনা । —আজ ইলিশ মাছ এনে কাল রান্না হবে ? —কেন হবে না ? আজ বেশ করে ভেজে রাখবো রাতে । কাল মাছ পাবেন কোথায় হাট ছাড়া ? কাল না খাওয়ালে ওঁদের কচুর শাক খাওয়ানো হবে না। পরশু চলে যাবেন সব । —যাবেন সত্যি ? আমার মনে হচ্চে না । দীপু আমার কথার শ্লেষ বুঝতে না পেরে বল্পে-কেন মনে হচ্চে না ? মেয়েও তো দত্তমশায়েরই। বাপের মতই সরল। বল্লাম—ন, তাই বলচি । —বাবা বলছিলেন কালকের দিনটা ওঁরা আছেন, পরশু চলে যাবেন । কাল রাতে তালের বড় করে খাওয়াতে । —বেশ বেশ । খাওয়াও । অতিথিসেবায় পরম পুণ্য । —কত রকমের রান্না হচ্ছে বাড়িতে। কিন্তু আপনাকে দিতে পারিনে বলে কষ্ট হয় । —দিতে বাধা দিচ্চে কে ? আমি বাধা দিইনি অন্তত ।