পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৩৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উৎকর্ণ ৩২৭ এতটুকু ঠাণ্ডা নয়, এমন কি শিলংএও নয়। বরপানি নদীতে বর্ষার পরিপূর্ণ যৌবনের জোয়ার এসেচে–শিলাখণ্ড থেকে আর এক শিলাখণ্ডে লাফিয়ে আছড়ে পড়ে কি তার উদাম মাতন! আমার পুরোনো ক্ষো-ভিউ হোটেলে এসেই উঠলুম। ওদের কলটার কাছে সেই গোলাপগাছটা তেমনি আছে, থোকা থেকে রাঙা গোলাপ ফুটেচে। বড় মেঘ আর বৃষ্টি শিলং-এ। পাইন বনে মেঘ জমে আছে শাশ্বত, আর টিপটিপে জল, রৌদ্র দেখলুম না কখনও শিলং-এ। লাবানে যাবার সময় গোটা পথটাতেই বৃষ্টি। আজ আসামের ভূতপূৰ্ব্ব গবর্নর সার মাইকেল কিনের মৃত্যু উপলক্ষে স্কুল কলেজ আপিস সকালে ছুটি হয়ে গিয়েচে । তাই ভাবলুম সুপ্রভাদের কলেজও নিশ্চয়ই বন্ধ হওয়াতে সে সনৎ কুটিরেই ফিরে এসেচে। ওকে পেলামও তাই। হঠাৎ আমায় দেখে খুব খুশি হল । আমিও বড় আনন্দ পেলাম অনেকদিন পরে ওকে দেখে । ওর দিদির দুই মেরে রেবা ও সেবাকেও দেখলুম। কমলা সেনের সঙ্গে আলাপ হল। অনেকক্ষণ বসে ওদের সঙ্গে গল্প করে সাড়ে ছাঁটায় উঠে গবর্নরের বাড়ির পেছন দিয়ে মুশীলবাবুদের বাড়ি Heath Back Cottage-এ গেলুম। মুশীলবাবু তো আমায় দেখে অবাক! আমি কোথা থেকে এলুম শিলংএ! শঙ্কর এল ফুটবল খেলে সন্ধ্যার সময় । সে বড় হয়ে গিয়েচে, আর যেন চেনা যায় না । লুম শিলংএর পাইনবনে মেঘ জমেচে । এই সন্ধ্যায় আমি দূর বাংলাদেশের এক ক্ষুদ্র পল্লীর কথা ভাবচি । স্বপ্রভা বলছিল, কাল আপনি ডাউকি পৰ্য্যন্ত বেড়িয়ে আমুন। শঙ্করও বল্লে, সে কাল সকালে এখানে আসবে। দেখি কোথায় পাওয়া যায় । সকালে শঙ্কর এসে ডাকাডাকি করে ঘুম ভাঙালে । তার সঙ্গে ওয়ার্ড লেক ও বোটানিক্যাল গার্ডেনে বেড়িয়ে মৌখরা গেলুম ডাউকির মোটর কখন ছাড়ে দেখতে । শুনলুম ও পর্য্যন্ত রিটার্ণ টিকিট দেয় না—মুতরাং চেরাপুঞ্জি রওনা হলাম। আবার সেই আপার শিলংএর রাস্তা ! সেই পাইনবন পথে তিন চার রকমের বন্যফুল ফুটে আছে প্রাস্তরে, একটা হলদে, একটা ভায়োলেট, একটা লাল, একটা সাদা। ঠিক যেন মরসুমী ফুলের ক্ষেত। সৰ্ব্বত্র অজস্ৰ ফুটে রয়েচে–চেরার একটু আগে পর্য্যন্ত । চেরাতে নেই, মুম্বাইতেও নেই। যাবার সময় Gorge-এ খুব মেঘ করেছিল, খানিকদূর পর্য্যন্ত মনে হল যেন আকাশ এরোপ্লেনে চলেচি। চেরার কাছে অদ্ভুত আকৃতির জঙ্গল আছে—তার প্রত্যেক গাছটাতে অসংখ্য পরগাছা, শেওলা ঝুলচে, ফার্ণ হয়ে আছে—কি ঘন কালো জঙ্গলের তলাটা। আনারস কিনে খেলুম চারপয়সা দিয়ে একটা। খাসিয়া দোকানদার কেটে প্লেটে করে দিল । বেশ মিষ্টি আনারস । একজন ডাক্তার তার ডাক্তারখানায় নিয়ে গিয়ে বসালেন। তারপর মুন্নাই পৰ্য্যন্ত গেলুম বাসে। চমৎকার দিন আজ, মুসমাইএর পথে নীল আকাশ একটুখানি দেখা গেল। সবাই বলে, এত ভাল দিন অনেকদিন হয়নি। মুস্মাই জলপ্রপাতের এপারে একটা পাথরে কতক্ষণ বসে রইলুম—একধারে সিলেটের সমতলভূমি ঠিক যেন সমুদ্রের মত দেখাচ্চে। একসময়ে তো ওখানে সমুদ্রই ছিল, খাসিয়া জয়স্তিয়া পাহাড় ছিল প্রাচীন যুগের সমুদ্রতীরে । ঢেল এসে তাল মারত পাহাড়ের দেওয়ালের গায়ে। চুের থেকে ফিরবার পথে আবার সেই ফুলের ক্ষেত–মাঠের সর্বত্র ওই চার রকম ফুলের বাগান। একটা খাসিয়া গ্রামে বাংলা দেশের গোয়ালের মত একখানা অপকৃষ্ট ভাঙা খড়ের ঘরে টুপিপর ছেলেমেয়ে, ফর্স মেয়ের। বেড়ার ফর্গেটু-মি-নটের বাহার দেখে মনে হল