পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৪১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

808 বিভূতি-রচনাবলী দেবীদের হাট করে দিলে। আমরা আবার ফিরে এলুম বনগ। সেখান থেকে চ খেয়ে ওর চলে গেল। কল্যাণীকে আজকাল ধড় ভালো লাগচে । মঙ্গলবার পর্য্যন্ত ছাড়ে নী—যেমন এসেচি কলকাতায় অমনি এক চিঠি—এ শনিবার না এলে মরে যাব। বড় ভালবাসে । আজ একটি মহা স্মরণীয় দিন বাঙালীর । সকালে উঠে লেখাপড়া করচি, বিশ্ব বিশ্বাস এসে বল্লে, রবীন্দ্রনাথ আর নেই। শুনেই তখনি রবীন্দ্রনাথের বাড়ি চলে গেলুম। বেজায় ভিড় —ঢোকা যায় না । সেখানে গিয়ে শোনা গেল রবীন্দ্রনাথ মারা যান নি, তবে অবস্থা খারাপ । ওখান থেকে এসে স্কুলে গেলুম। স্কুলে শুনলাম তিনি যারা গিয়েছেন ১২টা ১৩ মিনিটের সময়। স্কুল তখুনি বন্ধ হল । আমি ও অবনীবাবু, ক্ষেত্রবাবু, স্কুলের ছেলের দল কলেজ স্কোয়ার দিয়ে হেঁটে গিরীশ পার্কের কাছে গিয়ে দাড়ালুম। কিছুক্ষণ পরে বিরাট শবযাত্রার জনতা আমাদের ঠেলে নিয়ে চলল চিত্তরঞ্জন এভিনিউ বেয়ে । রমেন সেনের ভাই সুরেশের সঙ্গে আগের দিন প্রমোদবাবুর বাড়ি দেখা হয়েছিল—আমরা হাওড়া স্টেশনে তুলে দিয়ে যাই নীরদবাবুকে । সে আর আমি কলেজ ষ্ট্রীট মার্কেটের মধ্যে দিয়ে সেলেটের সামনে এসে আবার পুষ্পমালা শোভিত শবাধারের দর্শন পেলুম। পরলোকগত মহামানবের মুখখানি একবার মাত্র দেখবার স্বযোগ পেলুম সেনেটের সামনে । তারপর ট্রেনে চলে এলুম বনগ। শ্রাবণের মেঘনিন্মুক্ত নীল আকাশ ও ঘন সবুজ দিগন্ত বিস্তীর্ণ ধানের ক্ষেতের শোভা দেখতে দেখতে কেবলই মনে হচ্ছিল— গগনে গগনে নব নব দেশে রবি নব প্রাতে জাগে নবীন জনম লভি— ክ অনেকদিন আগে ঠিক এই সময়ে রবীন্দ্রনাথের "ছিন্ন পত্র পড়তে পড়তে বারাকপুরে ফিরেছিলুম—মায়ের হাতের তালের বড় খেয়েছিলুম, সে কথা মনে পড়ল । কল্যাণীকে শবাধারের শ্বেত-পদ্ম দিলুম, সে শুনে খুব দুঃখিত হল । তারপর হরিদার মেয়ের বিয়েতে গেলুম তার বাড়ি । খেতে বসে খুব বৃষ্টি এল । তারপর ক'দিন ছিলাম বনগী । খুকু এল অমুস্থ অবস্থায় । রাত্রে কল্যাণীকে নিয়ে দেখা করতে গেলুম ওর সঙ্গে। আবার পরদিন নিশিদার বাড়িতে বৌভাত র্তার ছেলের । সেখানেও গেলুম—যাবার আগে খুকুদের বাড়ি গিয়ে গল্প করলুম। কিন্তু মনে কেমন যেন একটা শূন্তত—রবীন্দ্রনাথ নেই! একথা যেন ভাবতেও পারা যাচ্চে न1 ।। গত জন্মাষ্টমীর দিন বিকেলে এখানে এলো বিভূতি, মন্মথদ। ওদের নিয়ে প্রথমে গেলাম শিবপুর লাইব্রেরীতে—তারপর রাত ন’টার ট্রেনে রওনা হয়ে নামলাম গালুডতে। ভোরের দিকে সুবর্ণরেখার পুল পার হয়ে শাল-জঙ্গলের পথে উঠলুম এসে কারখানার চিমনিটর কাছে। কতকালের পরিত্যক্ত তামার কারখানা—লোকও নেই, জনও নেই। গুররা নদীতে স্নান সেরে সবাই মিলে পিয়ালতলায় শিলাখণ্ডে বসে জলযোগ সম্পন্ন করলুম—তারপর তামাপাহাড় পার হয়ে নীলবর্ণায় নামলুম । সেখান দিয়ে আসবার পথে একটা ঝর্ণার জল পান করে আমরা একটা ছোট দোকানে কিছু চিড়ে ও চা কিনি। একটি ছোট মেয়ে দোকানে ছিল, সে চার জল গরম করে দিলে, তারপর ঘন বনের পথে হেঁটে পাটকিটা গ্রামে পৌঁছে গেলুম। গ্রামের বাইরে যে ছোট্ট বর্ণাটি, সেখানে বসে আমরা কিছু খেয়ে নিলাম। তারপর আবার হেঁটে রাণীঝর্ণার পাহাড় পার হয়ে ওপরে উঠলুম-দূরে মুবর্ণরেখা আবার দেখা যাচ্ছে—বেলা তখন তিনটে ।