পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/২২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২২২ বিভূতি-রচনাবলী রাজলক্ষী কিছল ভেবে বললে, যদি মা জিজ্ঞেস করে কোথায় পেলি ? —বলিস আমি দিয়েছি ! —এ নিয়ে কেউ কিছল বলবে না তো ? জানো তো নিম ঠাকরণকে, গাঁয়ের গেজেট । প্রভাসবাবর কথা বলবো না—কি বলো ? —সত্যি কথা বলছি, এতে আর ভয় কি ? নিমগ্ন ঠানদি এতে বলবে কি ? বলিস প্রভাসবাব দিয়েছিল শ্নরৎদিকে । —ভারি খারাপ মানুষ সব শরৎদি । তুমি যত সহজ আর ভালো ভাবো সবাইকে, আত ভালো কেউ নয়। আমার আর জানতে বাকী নেই । সেবার যে এখানে প্রভাসবাব এসেছিল, এ কথা গাঁয়ে রটনা হয়ে গিয়েছে । কাল যে এসেছিল আবার—তা নিয়েও কাল কথা হয়েছে । শরৎ বিস্ময়ের সরে বললে, বলিস কি রে ? কি কথা হয়েছে ? —অন্য কথা কিছ নয় শরৎ দিদি । শুধু এই কথা যে প্রভাসদা তোমাদের বাড়ি-আসাযাওয়া করছে আজকাল । তুমি না হয়ে অন্য মেয়ে যদি হত, তা হলে অনেকে অন্য রকম কথাও ওঠাতো—নিম ঠাকরণ, আমার জ্যাঠাইমা, হীরেন কাকার মা, জগন্নাথ দাদ–এরা । কিস্ত তুমি বলেই কেউ কিছু বলতে সাহস করে না । শরৎ যাত্রার দলের সর নকল করে টেনে টেনে হাত নেড়ে বললে, দেশের রাজকন্যার নামে অপকলঙ্ক রটাবে, কার ঘাড়ে ক'টা মাথা ? সব তা হলে গদান নেবো না দরাচারদের ? রাজলক্ষী হি হি করে হেসে লটিয়ে পড়ে আর কি ! মুখে কাপড় গজে হাসতে হাসতে বললে, উঃ, এত মজাও তুমি করতে জানো শরৎদি ! হাসিয়ে মারলে—মাগোঃ– শরৎ হাসিমুখে বললে, তবে একটু বসে যা লক্ষী দিদি আমার । দুটো মুড়ি খেয়ে যা— রাজলক্ষী দ্রবল সরের প্রতিবাদ জানিয়ে বললে, না শরৎদি—ফুল ভাজা হবে কখন তা হলে এবেলা ? আমায় আটকো না— —বোস । আমিও খাচ্ছি দুটো মুড়ি—নারকেল-কোরা দিয়ে । তুইও খাবি। যেতে দিলে তো ? সজনে ফুলের দভিক্ষ লাগে নি গড়শিবপুরে— খানিক পরে শরৎ মুড়ি খেতে খেতে বললে, শোন রে, তোর সঙ্গে একটা কথা আছে । অর্ণবাব এসেছিল প্রভাসদা’র সঙ্গে, দেখেছিস তো ? ওর সঙ্গে তোর বিয়ের কথা পাড়বো প্রভাসদা’র কাছে ? অরুণবাবরা বেশ অবস্হাপন্ন। বেশ ভালো হবে । রাজলক্ষী সলঙ্গ দটিতে শরতের মুখের দিকে চেয়ে বললে, কি যে তুমি বলো শরৎদি ! এক-এক সময় এমন ছেলেমানষে হয়ে যাও ! —ছেলেমান.ষ হওয়া কি দেখলি ? —ওরা আমায় নেবে কেন ? আমার কি রপেগণ আছে বলো ! তুমি যে চোখে আমায় দ্যাথো—সকলে কি সে চোখে দেখবে ? —সে ভাবনার তোর দরকার নেই। তুই শধ্যে আমায় বল প্রভাসদা’র কাছে কথা আমি পাড়বো কি না। অর্ণবাবকে পছন্দ হয় ? —দর—কি যে বলো ? শরৎদি একটা পাগল— —সোজা কথাটা কি বল না ? —ধরো যদি বলি হয়—তুমি কি করবে ? –তাই বল । আমি প্রভাসদা'র কাছে তা হলে কথাটা পেড়ে ফেলি। রাজলক্ষী চুপ করে রইল। শরৎ বললে, বাড়িতে বা অন্য কারো কাছে বলিস নে কোনো কথা এখন । রাজলক্ষী হাত নেড়ে বললে, হ্যা, আমি বলে বেড়াতে যাই, ওগো আমার বিয়ের সম্মবন্ধ