পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/৪৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪৪২ বিভূতি-রচনাবলী আদর-আহবান করচে, কাউকে বা শাসন করচে । একটা ছোট ঘরের মধ্যে সবাই ভিড় করে ঠাকুর দেখতে ঢুকচে দেখে আমিও ঢুকলমে । ছোট কালী প্রতিমা, নাম সশীলেশ্বরী। এক বন্ধ ভদ্রলোক বললেন, এখানে একজন বন্ধা থাকেন, তিনিই এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেচেন। একটু পরে সেই বন্ধাকেও দেখলাম, সবাই তাঁর পায়ের ধলো নিয়ে প্রণাম করচে । আর তিনি সবাইকে মিটি কথার বলচেন—না খেয়ে যেও না যেন বাবা । একটা ইট বাঁধানো চৌবাচ্চায় খিচুড়ি ঢালা হচ্চে, পাশেই আর একটা চৌবাচ্চায় কপির তরকারি। সকাল সকাল খাবার জন্যে সবাই উমেদারী করচে—অনেক দরে যাব, মেয়েছেলে নিয়ে এসেচি, ভাড়াটে গাড়ি, প্রসাদ দিয়ে দিন । আমাকে একটা ঘরে খাওয়াতে বসালে । আমার অত্যন্ত কৌতুহল হোল এখানে কি খাওয়ায় না দেখে যাবো না । তাই একটি মেয়েকে বলতেই সে আমায় ঐ ঘরটায় নিয়ে একখানা পাতা করে বসিয়ে দিলে । ঘরের মধ্যে আমার বসবার আসনের কাছেই আর একটি বাইশ-তেইশ বছরের মেয়ে বসে খাচ্ছে আর তার ছোট ছোট দটি ছেলে মেয়েকে খিচুড়ি মুখে তুলে খাওয়াচ্চে । যে মেয়েটি আমায় পাতা করে বসিয়ে দিয়েছিল সে কোথায় চলে গেল । আর একজন আমায় পরিবেশন করলে। খিচুড়ি, চচ্চড়ি, আলর দম, কপির তরকারি, বেগন ভাজা, চাটনি, পায়েস, দই, মড়কী ও রসগোল্লা। তা খর দিলে, পাতে ঘি দিলে। এটা নেবে, ওটা নেবে জিজ্ঞেস করে খাওয়ালে । কেমন যত্ন করলে যেন বাড়ির ছেলের মত, অথচ আমাকে তারা জীবনে এই প্রথম দেখলে । মেয়েদের এই একটা গণ, খাওয়াতে মাখাতে যত্ব করতে ওদের জড়ি মেলে না । খাওয়া শেষ হোল, আর একটি মেয়ে আবার সাজা পান দিলে । এমন মচ্ছবের খাওয়ায় যেখানে রবাহত অনাহত কত আসচে যাচ্চে তার ঠিকানা নেই, এখানে কে আবার খাওয়ার পরে পান দেয় ! এ আমি এই প্রথম দেখলাম । দেখে কন্ট হোল আমি যখন খাওয়া শেষ করে বাইরে এলাম, তখন সেই অলপ বয়সের বধাটি রোয়াকের সামনে পাত পেতে বসে আছে—তখনও তাদের কেউ খেতে দেয় নি। এদের জিনিসপত্র বেশী কিস্ত লোক কম । খাওয়ার সময়ে পরিবেশনকারিণী মেয়েরা বলাবলি কচ্ছিল—আর পারি নে বাপ । সকাল থেকে খাটচি, আর রাত বারোটা পৰ্য্যম্ভ কত খাটি ? আসচে বছর আর এখানে আসা চলবে না দেখচি । ওখান থেকে বার হয়ে একটা বশিবনের মধ্যের পথ ধরে অনেকটা হেটে গেলাম, বেলা পড়ে এসেচে, বাশবনে বেশ ঘন ছায়া, এক জায়গায় সাতটা ভাঙা শিব মন্দির সারি সারি, অনেকগুলো শিমল গাছ। ফুলে ফুলে রাঙা । বড় মাঠে বসে খানিকটা বিশ্রাম করলামতারপর এসে ট্রাম ধরে চৌরঙ্গির মোড়ে নামলম। সেন্ট্রাল এভিনিউ দিয়ে হেটে সন্ধীরবাবর দোকানে এসে ভাবলাম সরোজকে গল্পটা করব, দেখি সরোজ বেরিয়ে গিয়েচে । কি একটা অবণ'নীয় আনন্দ পেয়েছি আজ ! অথচ কেন যে সে ধরনের আনন্দ এল, এর কোন কারণ খুজে পাই নে। নীরদবাবর বাড়ি যখন বসে আছি, তখনই এটা প্রথম অনুভব করলাম, কিন্ত তখনই পপুপতিবাব ফোন করলেন এখনি আসন ইউনিভাসিটি ইনস্টিটিউটে প্রমথ বিশীর নাটক হচ্ছে । নীরদ যেতে পারলে না, আমি মিসেস দাসগুপ্তকে নিয়ে ওদের মোটরে ইনস্টিটিউটে এলম । সেখানে পরিমল গোস্বামী, প্রমথ বিশী এবং সবাই হাজির। পরিমল বললে, আপনার দণ্টিপ্রদীপ’ পড়েচি, কাল রাত্রে । বড় ভাল লেগেচে । আরও গল্পগুজব চলল। আমি গিয়ে বৌঠাকরনের সঙ্গে দেখা করে এলমে । তারপর ওখান থেকে পাক সাকর্ণসে মণীন্দ্র বসরে বাড়িতে চা-পাটিতে এলাম, কারণ সেখানে জ্যোৎস্নার