পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

సిశి বিভূতি-রচনাবলী দিদিমা থাকিতে এ-সব কট ছিল না । দিদিমা তাহাকে ঘুম না পাড়াইয়া নামিতেন না । কাজল উপরে আসিয়াই বিছানার উপরকার সাজানো লেপ-কাঁথার স্তপের উপর খশী ও আমোদের সহিত বার বার লাফাইয়া পড়িয়া চে'চাইতে থাকিত—আমি জলে ঝাঁপাই—হি-হি —আমি জলে ঝাঁপাই—ও দিদিমা—হি-হি— 爵 কোনোরকমে দিদিমা তাহার লাফানো হইতে নিবৃত্ত করিয়া শোয়াইতে কৃতকাষ" হইলে সে দিদিমার গলা জড়াইয়া ধরিয়া বলিত,—এইবার একতা গ-গ-অ-প –কথার শেষের দিকে পাতলা রাঙা ঠোঁট দটি ফুলের কড়ির মত এক জায়গায় জড় করিয়া না আনিলে কথা মুখ দিয়া বাহির হইত না । তাহার দিদিমা হাসিয়া বলিত—যে গড় খাস, গড় খেয়ে খেয়ে এমনি তোংলা । গল্প বলব, কিন্তু তুমি পাশ ফিরে চুপটি ক'রে শোবে, নড়বেও না, চড়বেও না । কাজল ভ্ৰ কুচকাইয়া ঘাড় সামনের দিকে নামাইয়া থংনী প্রায় বকের উপর লইয়া আসিত। পরে চোখের ভুর উপরের দিকে উঠাইয়া হাসি-ভরা চোখে চুপ করিয়া দিদিমার মুখের দিকে চাহিয়া থাকিত । দিদিমা বলিত, দ,"মি ক'রো না দাদাভাই, আমার এখন অনেক কাজ, তোমার দাদ, আবার এখনি পাশার আডা থেকে আসবেন, তাঁকে খেতে দেব। ঘমোও তো লক্ষয়ী ভাইটি ! কাজল বলিত, ইল্লি “দা-দা-দাদকে খাবার দেবে তো ছোট মামীমা, তু-তুমি এখন যাবে বৈ কি ?—একতা গ-গ-অ-প কর, হ’্যা দিদিমা— এ ধরণের কথা সে শিখিয়াছে বড় মাসতুতো ভায়েদের কাছে । তাহার বড় মাসীমার ছেলে দল কথায় কথায় বলে—ইল্লি ! কাজলও শনিয়। শনিয়া তাহাই ধরিয়াছে। তাহার পর দিদিমা গল্প করিতেন, কাজল জানালার বাহিরে তারাভরা, স্তব্ধ, নৈশ আকাশের দিকে চাহিয়া একবার মুখ ফুলাইত আবার হা করিত, আবার ফুলাইত আবার হাঁ কৱিত। দিদিমা বলিত—আঃ, ছিঃ দাদ! ও-রকম দ"মি করলে ঘািমবে কখন ? এখনি তোমার দাদা ডাকবেন আমায়, তখন তো আমায় যেতে হবে । চুপটি করে শোও । নইলে ডাকব তোমার দাদকে ? দাদামহাশয়কে কাজল পড় ভয় করে, এইবার সে চুপ হইয়া যাইত। কোথায় গেল সেই দিদিমা ! সে আরও বছর দেড় আগে, তখন তাহার বয়স সাড়ে-চার বছর—একদিন ভারি মজার ব্যাপার ঘটিয়াছিল । সে রাত্রে ঘুমাইতেছিল, সকালে উঠিলে আর চুপি চুপি বলিল— ঠাকুমা কাল রাতে মারা গিয়েছে, জানিস নে কাজল ? —কো-কোথায় গিয়েছে ? —মারা গিয়েছে, সত্যি আজ শেষরাত্রে নিয়ে গিয়েছে । তুই ঘমেচ্ছিলি তখন । —আবার ক-কবে আসবে ? f অর বিজ্ঞের সরে বলিল—আর বঝি আসে ? তুই যা বোকা । ঠাকুরমাকে তো পোড়াতে নিয়ে চলে গেছে ওই দিকে –সে হাত তুলিয়া নদীর বাঁকের দিকে দেখাইয়া দিল। অর ভারী চালবাজ। সব তাতেই ওই রকম চাল দেয়, ভারি তো এক বছরের বড়, দেখায় যেন সব জানে, সব বোঝে । ওই চালবাজির জন্যই তো কাজল অরকে দেখিতে পারে না । সে খবে বিন্মিতও হইল। দিদিমা আর আসিকে না কেন ? “কি হইয়াছে দিদিমার ?” বা-রে ! * কিন্ত সেই হইতে দিদিমাকে আর সে দেখিতে পায় নাই । গোপনে গোপনে অনেক কাঁদিয়াছে, কোথায় দিদিমা এরকম একরাত্রের মধ্যে নিরদেশ হইয়া যাইতে পারে, সে সম্বন্ধে অনেক ভাবিয়াছে, কিছু ঠিক করিতে পারে নাই । আজকাল আর কেহ কাছে বসিয়া খাওয়ায় না, সঙ্গে করিয়া উপরে লইয়া আসে না, গল্প