পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

848 বিভূতি-রচনাবলী মাধোলাল একদিন আমার তার বাড়িতে নিমন্ত্রণ করলে। খাওয়ালে মোটা মোটা যবের আটার রুটি, উচ্ছে ভাজা ও লঙ্কার আচার। এদেশে নিমন্ত্রিত ব্যক্তিকে ভালো-মন্দ খাওয়ানো উচিত বলে আদৌ ভাবে না, যা হয় খাওয়ালেই হল। মাধোলালের বাড়ি খেয়ে আমার পেট ভরলো না। রুটি দিয়ে উচ্ছে ভাজা কখনো খাইনি, মুখাষ্ঠের তালিকার মধ্যে অন্তত আমি এই অদ্ভুত সংমিশ্রণের নাম করতে পারিনে। শেষকালে এল যে জিনিসটা, তাকে আমি নাম দিয়েচি গমের পায়েস। কাচা গমের ছাতুর সঙ্গে দুধ আর ভেলিগুড় গুলে এই জিনিসটি তৈরী, তার সঙ্গে মেথি বাট ও হিং মিশানো, বাঙালীর মুখে অথান্ত । খাওয়ার পরে মাধোলাল আমার কাছে এক অদ্ভুত প্রস্তাব করলে। —বাবুজি, আপনি এদেশে বাস করুন। —কেন মাধোলালজি ? —আপনাকে বড় ভালো লাগে। এদেশে বিয়ে করুন না ? —বলে কি মাধোলালজি। আমাদের সঙ্গে গোড়া ছত্রিশগড়ি সমাজের কে মেয়ের বিয়ে দেবে ? —বাবুসাহেব, বলেন তো যোগাড় করি। কেন দেবে না ? —আছে নাকি সন্ধানে ? --আপনি বললেই সন্ধান করি। অাছেও। —এই গীয়েই নাকি ? —হঁ্যা বাবুজি। ব্রাহ্মণের মেয়ে, দেখতে বেশ সুন্দরী। —গোড় সমাজের ? —না বাৰু, গোড়দের জন্তে মিশনে পালিত মেয়ে। ইংরিজি লেখাপড়, হচের কাজ, রান্না—সব জানে। মনে মনে মাধোলালের বুদ্ধির প্রশংসা না করে পারলাম না। মিশনে পালিত মেয়ে ছত্রিশগড়ি সমাজের কেউ বিয়ে করবে না জেনে শুনে। তবে বাঙালী বাবুদের জাতও নেই, সমাজও নেই, দাও তার ঘাড়ে চাপিয়ে । আমার বন্ধুর কাছে জিজ্ঞেস করে জানলুম মাধোলাল একজন সমাজসংস্কারক। মেয়েটিকে সে এনে নিজের বাড়িতেই রেখে দিয়েচে আজ চার-পাঁচ বছর, তাকে ভালো জায়গায় বিয়ে দেওয়া মাধোলালের একটা সাধ । মাধোলাল দু তিন-দিন পরে আমার আর একদিন রাস্তায় পাকড়ালে। —বাবুজি, আমার সেই কথার কি হল ? —সে হবে না মাধোলালজি । —কেন বাবুজি, মেয়ে আপনি দেখুন কেমন, তারপর না হয়—