বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/১৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মরণের ডস্ক বাজে ^(శ్రీ বুঝুক সে কথা। মিং-চাউয়ের রেল স্টেশনে পৌছে সবাই খাওয়া-দাওয়া করবার হুকুম পেলে। বিমল ব্যস্ত হয়ে পড়লে৷ মিনি ও এ্যালিসকে কিছু খাওয়াতে। খাবার কিছুই নেই। অন্ততঃ সভ্য খাদ্য কিছু নেই। কমাণ্ডাণ্ট কে বলে কিছু চাল যোগাড় করে একটা গাছতলায় এ্যালিস্ একটা পুরানো সস্-প্যানে ভাত চাপিয়ে দিলে তিন জনের মত। বেলা প্রায় বারোটা ! রৌদ্র বেশ প্রখর, কিন্তু গরম নেই, বেশ শীত। ভাত প্রায় হয়ে এসেছে, এমন সময় দলে দলে ছোট্ট শীর্ণকায় ছেলেমেয়ে গাছতলায় নীরবে এসে দাড়ালে। তারা ক্ষুধার্তের ব্যগ্র দৃষ্টিতে সস-প্যানের দিকে চেয়ে রইল। জনৈক মেয়ে সৈনিক বল্লে—এরা আশপাশের গ্রামের দুভিক্ষ-পীড়িত ছেলেমেয়ে ; আমাদের দেশে ভয়ানক দুভিক্ষ চলছে। ওরা খাবার লোভে এসেছে। এ্যালিস বল্পে—পুওর লিট্‌ল ডিয়ারস্!.ওদের কি খেতে দিই, বিমল ? বিমল মুশকিলে পড়ে গেল। নিজের খাওয়ার জন্যে নয়—মিনি ও এ্যালিস কত দিন পেট ভরে খায়নি বলেই ও ওদের খাওয়াতে ব্যগ্র ছিল। নিজে না হয় না থাবে, কিন্তু এ্যালিস, যেমন মেয়ে নিজের মুখের ভাত সব এক্ষুনি তুলে দেবে এখন এদের। স্বখের বিষয় একটা সমাধান হোল। ওরা চীনা ছেলে-মেয়ে, চীনা খাবার খেতে আপত্তি নেই। অন্য অন্য মেয়ে-সৈনিকর ওদের দেশীয় খাদ্য কিছু কিছু দিলে। তারা চলে গেল তাই খেয়ে। এ্যালিসের ইচ্ছে ওদের মধ্যে একটা ছোট ছেলে নিয়ে যায়। বল্লে—বিমল, বলে না ওদের মধ্যে কাউকে আমার সঙ্গে যাবে। আমি খুব যত্ন করবো। বিমল হাসলে, তা কি কখনো হয় ? একটু পরে একখানা ট্রেন এল। তাতে সব খোলা ট্রাকৃ, কয়লার গাড়ীর মত। কমাণ্ডাণ্টের আদেশে সবাই তাতে উঠে পড়লো। ট্রেনের গার্ডের মুখে শোনা গেল জাপানীরা এখান থেকে বাইশ মাইল ডাউন লাইনে একখানা সৈন্যবাহী ট্রেন এরোপ্লেন থেকে বোমা মেরে উড়িয়ে চুরমার করে দিয়েছে। ট্রেন ছাড়লো। গার্ড বল্লে— ভয়ানক বিপজ্জনক অবস্থা। ওরা প্রত্যেক সৈন্যবাহী ট্রেনের ওপর কড়া লক্ষ্য রেখেছে। পৌছে দিতে পারবো কিনা নিরাপদে তার ঠিক নেই। মাইল ত্রিশেক দুধারে ফাকা মাঠ, ধানের ক্ষেত, গমের ক্ষেতের মধ্য দিয়ে ট্রেন চলল। বেলা প্রায় পাচটা বাজে, রোদ নেই। মাঠে ঘন ছায়া পড়ে এসেছে। এমন সময় একটা পরিচিত আওয়াজ শুনে বিমলের বুকের মধ্যেটা কেমন করে উঠলো। মুখ উচু করে দেখতে গিয়ে দেখলে ট্রেনের সবাই মুখ তুলে চেয়ে রয়েছে। অনেকগুলি এরোপ্লেনের সম্মিলিত ঘর্ঘর আওয়াজ । ট্রেন যেন গতি বাড়িয়ে দিয়ে জোরে চলতে লাগলো। মিনি বল্লে—ওই দেখো বিমল এরোপ্লেনের সারি ! বম্বার – চক্ষের নিমেষে এরোপ্লেন সারি নিকটবর্তী হোল—কিন্তু ট্রেনখানাকে গ্রাহ না করেই যেন এরোপ্লেনগুলো উত্তর থেকে দক্ষিণে চলে যাচ্ছিল—হঠাৎ একখানা বস্থার দল ছেড়ে বেশ নীচু