পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/৩০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৯০ বিভূতি-রচনাবলী —ত্রিবাঙ্কুরের সেই গায়ে গেলে না ? লোকটা বললে, প্রথমে ওর লোভ হয়েছিল খুব। পদ্মরাগ মণিটার দাম যাচাই করে দেখা গেল প্রায় দেড় হাজার টাকা দাম সেটার। তা ছাড়া আরও লোভ হল, নটরাজনের ছেলেকে ম্যাপ দেবার কী দরকার ? এই ম্যাপের সাহায্যে সে-ই তো জায়গাটা খুজে বার করতে পারে। বিশেষ করে একবার যখন সেখানে সে গিয়েছিল। কিন্তু তিন চার দিন ভাবার পরে ওর মনে হল মরবার আগে বিশ্বাস করে নটরাজন ওর হাতে জিনিসগুলো সঁপে দিয়েছে তার ছেলেকে দেবার জন্তে। এখন যদি না দেয়, তবে নটরাজনের ভূত ওর পেছনে লেগে থাকবে, হয়ত বা মেরে ও ফেলতে পারে । অতএব খানিকটা ইচ্ছা এবং খানিকটা অনিচ্ছাতে সেখানে ধেত সে বাধ্যই হল। বড় মজার ব্যাপার ঘটল কিন্তু সেখানে। স্বশীল বললে—কি রকম ? —বাবুজি, অনেক কষ্ট করে বেউয়। কাপ্লিয়াম্ নদীর ধারে সেই কেটিউল্পী গায়ে গিয়ে পোঁছলাম। দেখলাম নটরাজন মিথ্যে বলে নি, নদীটা একেবারে ওদের গ্রামের নিচে দিয়েই গিয়েছে বটে। নিজের পকেট থেকে যাওয়ার খরচ করলাম। গায়ে গিয়ে যাকেই জিজ্ঞেস করি, কেউ নটরাজনের ছেলের খোজ দিতে পারে না। নটরাজনের কথাই অনেকের মনে নেই। দু-একজন বুড়ো লোক বললে, নটরাজনকে তারা চিনত বটে—তবে অনেকদিন আগে সে নিরুদ্দেশে হয়ে যায়, তার স্ত্রী ছেলেকে নিয়ে কোথায় চলে গিয়েছে তারা জানে না। —তারপর ? —মানে খানিকটা আনন্দ যে না হল তা নয় । ছেলেকে যদি সন্ধান না করতে পারি তবে আমার দোষ কী ! তবুও একে ওকে জিগ্যেস করি । শেষকালে গায়ের কাছারিতে কি ভেবে গিয়ে খোজ করলাম। তারা শুনে বললে, অনেকদিন আগে নটরাজনের জায়গাজমি নীলাম করতে হয়েছিল খাজনা না দেওয়ার জন্যে । নীলামের নোটিশ তারা পাঠিয়েছিল ত্ৰিবেশ্রাম শহরে । —পেলে খুজে ? —ঠিকানা তো খুজে বার করলাম। ছোট্ট একটা কাঠের বাড়ী, নারকেল গাছের বাগান সামনে। শহরের মধ্যে বাড়ীটা নয়, শহর থেকে মাইল খানেক দূরে। অনেক ডাকাডাকির পরে এক বুড়ি এসে দোর খুলে দিলে। মাথার চুল সব সাদা হয়েছে, অথচ মুখ দেখে খুব বয়স হয়েছে বলে মনে হয় না। বললে—কাকে চাও? আমি বললাম—নটরাজনের ছেলের সঙ্গে দেখা করতে এসেছি। বুড়ী আমার মুখের দিকে আবাক হয়ে চেয়ে বললে—ও নাম কোথায় শুনলে ? ও নাম তো কেউ জানে না! আমি ডখন সব কথা বুড়ীকে বললাম। শুনে বুড়ী কেঁদে ফেললে। বললে—আমার ছেলেও আজ নিরুদেশ, তার বাপের মত সেও বেরিয়েছে-আজ তিন বছর হয়ে গেল ! কোন খবর পাই নি । —তুমি কী করলে ? —এই কথা শুনে আমার বড় কষ্ট হল, বাবুজি। আমি সেখানে বুড়ীর বাড়ী সাত