পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/৩৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\రిల్సి বিভূতি-রচনাবলী হ্যা, সত্যিই তাই। এই বাতিটার সামনে ছিল ওই পা-খান—এখন পায়ের হাটুর পেছনের অংশ দেখা যায় কী করে ? সে তো এতটুকু নড়ে নি নিজে, যেখানে—সেখানেই বসে अizछ् । স্বণীলের ভয় হল। শ্মশানপুরীর ভূগর্ভস্থ কক্ষ, কত শতাব্দীর পুত্ৰীভূত দৈত্যদানোর দল জমা হয়ে আছে এসব জায়গায়, কে বলতে পারে ? কিসে মৃত্যু আর কিসে জীবন, এ বার্তা পৌঁছে দেবার লোক নেই। সরে পড়াই ভাল। এমন সময় ওপর থেকে লণ্ঠনের আলো এসে পড়ল, পায়ের শব্দ শোনা গেল। জামাতুল্লা লণ্ঠন নিয়ে ঘরের মধ্যে ওপর থেকে উকি মেরে বললে—বাবুজি, ঠিক আছেন ? --তা আছি। ঘরের মধ্যে নামে তো জামাতুল্লা— 劇 জামাতুল্লা ঘরের মেঝেতে নেমে ওর পাশে দাড়ালো। স্বশীল ওকে মূৰ্ত্তির ব্যাপারটা দেখিয়ে বললে—এখন তুমি কী মনে কর । —কিছু বুঝতে পারছি নে বাবুজি—খুব তাজব কথা । —তুমি থাক এখানে—বোস— কিন্তু জামাতুল্লা দাড়াল না। দুজনে এখানে বসে থাকলে ইয়ার হোসেনের দলের সন্দেহ ঘোরালো রকম হয়ে উঠবে, সে থাকতে পারবে না। জামাতুল্লা চলে যাবার পর স্বশীল অনেকক্ষণ মূৰ্ত্তিটার দিকে চেয়ে বসে রইল। মূৰ্ত্তিটা এবার বেশ ঘুরে গিয়েছে, এ সম্বন্ধে আর কোন সন্দেহ থাকতে পারে না। ওর আগের ভয়ের ভাবটা কেটে গিয়েছিল জামাতুল্লা লণ্ঠন নিয়ে আসার পর থেকে, এখন ভয়ের চেয়ে কৌতুহল বেশি। খুব একটু একটু করে ঘুরছে, ঘূর্ণ্যমান রঙ্গমঞ্চের মতই, মূর্তির পদতলস্থ বিটম্ববেদিকা। কেন ? কী উদ্দেশ্বে ? অতীত শতাব্দীগুলো মুক হয়ে রইল, এর জবাব মেলে না। বেলা গড়িয়ে এল, সুশীলের হাতঘড়িতে বাজে পাচটা । হঠাৎ স্বশীল চেয়ে দেখলে আর একটি আশ্চৰ্য্য ব্যাপার। নর্তকী-মুক্তির সরু সরু আঙুলগুলির মধ্যে একটা আঙুল একটি মুদ্র রচনা করার দরুন অন্ত সব জাঙল থেকে পৃথক এবং একদিকে কী যেন নির্দেশ করবার ভঙ্গিতে ছিল। এবার যেন সে আঙুলের ছায়া পড়েছে দেওয়ালের এক বিশেষ স্থানে। এমন ভঙ্গিতে পড়েছে যেন মনে হয় মূৰ্ত্তিটি তর্জনী-অঙ্গুলির দ্বারা ভিত্তিগাত্রের একটি স্থান নির্দেশ করছে । তখনি একটা কথা মনে হল স্বশীলের। লন্ঠনের আলোর দ্বারা এ ছায়া তৈরি হয়েছে, না কোন গুপ্ত ছিদ্রপথে দিবালোক প্রবেশ করেছে ঘরের মধ্যে ? s তা-ই বলে মনে হয়, লন্ঠনের আলোর কৃত্রিম ছায়া এ নয়। ও লন্ঠনের আলো কমিয়ে দিয়ে দেখলে-তখন অস্পষ্ট আলো-অন্ধকারের মধ্যেও তর্জনীর ছায়া ভিত্তিগাত্রে পড়ে একটা স্থান যেন নির্দেশ করছে। অত্যন্ত আশ্চৰ্য্য হয়ে উঠে ও জায়গাটা দেখতে গেল।