বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চাদের পাহাড় ૨૪ তো অবাক। এমন দৃশ্ব সে আর কখনো দেখে নি। জিরাফগুলো মানুষকে আদৌ ভয় করে না, পঞ্চাশ গজ তফাতে দাড়িয়ে ওদের দিকে চেয়ে চেয়ে দেখতে লাগল। আলভারেজ বলল—আফ্রিকার জিরাফ মারবার জন্যে গবর্নমেন্টের কাছ থেকে বিশেষ লাইসেন্স নিতে হয়। যে সে মারতে পারে না । সেজন্য মানুষকে ওদের তত ভয় নেই। হরিণের দল কিন্তু বড় ভীরু, এক এক দলে দু-তিনশো হরিণ চরছে, ওদের দেখে ঘাস খাওয়া ফেলে মুখ তুলে একবার চাইলে, তার পরক্ষণেই মাঠের দূর প্রান্তের দিকে সবাই চার পা তুলে দৌড়। কিম্বুমু থেকে ষ্টীমার ছাড়ল—এটা ব্রিটিশ ইমার, ওদের পয়সা নেই বলে ডেকৃ-এ যাচ্ছে। নিগ্রে মেয়েরা পিঠে ছেলেমেয়ে বেঁধে মুরগী নিয়ে স্ট্রীমারে উঠেছে। মাসাই কুলীরা ছুটি নিয়ে দেশে যাচ্ছে—সঙ্গে নাইবেরি শহর থেকে র্কাচের পুতি, কম দামের খেলো আয়না, ছুরি প্রভৃতি নানা জিনিস। স্টীমার থেকে নেমে আবার ওরা পথ চলে। ভিক্টোরিয়া হ্রদের যে বন্দরে ওরা নামলে— তার নাম মোওয়ান্‌জা—এখান থেকে তিনশো মাইল দূরে ট্যাবোরা, সেখানে পৌছে কয়েক দিন বিশ্রাম করে ওরা যাবে টাঙ্গানিয়াকা হ্রদের তীরবর্তী উজিজি বন্দরে। এই পথে যাবার সময় আলভারেজ বললে—টাঙ্গানিয়াকার মধ্যে দিয়ে যাওয়া বড় বিপজ্জনক ব্যাপার। এখানে এক রকম মাছি আছে, তা কামড়ালে স্লিপিং সিকৃনেস্ হয়। স্লিপিং সিকনেসের মড়কে টাঙ্গানিয়াক জনশূন্য হয়ে পড়েছে। মোওয়ান্‌জা থেকে ট্যাবোরার পথে সিংহের ভয়ও খুব বেশী। প্রকৃতপক্ষে আফ্রিকার এই অঞ্চলও সিংহের রাজ্য’ বলা চলে । শহর থেকে দশ মাইল দূরে পথের ধারে একটা ছোট খড়ের বাংলো। সেখানে এক ইউরোপীয় শিকারী আশ্রয় নিয়েছে। আলভারেজকে সে খুব খাতির করলে। শঙ্করকে দেখে বললে—একে পেলে কোথায় ? এ তো হিন্দু! তোমার কুলী ? আলভারেজ বললে—আমার ছেলে। সাহেব আশ্চৰ্য্য হয়ে বললে—কি রকম ? আলভারেজ আন্থপূৰ্ব্বক সব বর্ণনা করলে, তার রোগের কথা, শঙ্করের সেবাশুশ্ৰুষার কথা। কেবল বললে না কোথায় যাচ্ছে ও কি উদ্দেশ্যে যাচ্ছে। সাহেব হেসে বললে—বেশ ভালো। ওর মুখ দেখে মনে হয় ওর মনে সাহস ও দয়া দুইই আছে। ঈস্ট ইণ্ডিজের হিন্দুরা লোক হিসেবে ভালোই বটে। একবার ইউগাণ্ডাতে একজন শিখ আমার প্রতি এমন স্বন্দর আতিথ্য দেখিয়েছিল, তা কখনো ভুলতে পারবো না। আজ তোমরা এসো, রাত সামনে, আমার এখানেই রাত্রি যাপন করে । এটা গবর্নমেন্টের ডাকবাংলো। আমিও তোমাদের মত সারাদিন পথ চলে বিকেলের দিকে এসে উঠেছি। সাহেবের একটা ছোট গ্রামোফোন আছে, সন্ধ্যার পরে টিনবন্দী বিলাতী টোমাটোর