পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\9e বিভূতি-রচনাবলী ঝোল ও সার্ডিন মাছ সহযোগে সান্ধ্যভোজন সমাপ্ত করার পরে সবাই বাংলোর বাইরে ক্যাম্পচেয়ারে শুয়ে রেকর্ড শুনে যাচ্ছে, এমন সময় অল্প দূরে সিংহের গর্জন শোনা গেল। বোধ হল মাটির কাছে মুখ নামিয়ে সিংহ গর্জন করছে- কারণ মাটি যেন কেঁপে কেঁপে উঠছে। সাহেব বললে—টাঙ্গানিয়াকায় বেজায় সিংহের উপদ্রব আর বড় হিংস্র এরা। প্রায় অধিকাংশ সিংহই মানুষখেকো। মানুষের রক্তের আস্বাদ একবার পেয়েছে, এখন মারুষ ছাড়া আর কিছু চায় না। শঙ্কর ভাবলে খুব স্বসংবাদ বটে। ইউগাণ্ডা রেলওয়ে তৈরী হবার সময়ে সে সিংহের উপদ্রব কাকে বলে খুব ভালই দেখেছে। পরদিন সকালে ওরা আবার রওনা হল, সাহেব বলে দিলে স্থৰ্য্য উঠে গেলে খুব সাবধান থাকবে । স্লিপিং সিকৃনেসের মাছি রোদ উঠলেই জাগে। গায়ে যেন না বসে। দীর্ঘ দীর্ঘ ঘাসের বনের মধ্যে দিয়ে স্থড়িপথ। আলভারেজ বললে—খুব সাবধান, এই সব ঘাসের বনেই সিংহের আড্ডা। বেশী পেছনে থেকে না। আলভারেজের বন্দুক আছে, এই একটা ভরসা। আর একটা ভরসা এই যে, আলভারেজ যাকে বলে ‘ক্র্যাকৃ শট’ তাই। অর্থাৎ তার গুলি বড় একটা ফস্কায় না। কিন্তু অত বড় অব্যর্থ-লক্ষ্য শিকারীর সঙ্গে থেকেও শঙ্কর বিশেষ ভরসা পেলে না, কারণ ইউগাণ্ডার অভিজ্ঞতা থেকে সে জানে, সিংহ যখন যাকে নেবে, এমন সম্পূর্ণ অতকিতেই নেবে যে পিঠের রাইফেলের চামড়ার স্ট্র্যাপ খোলবার অবকাশ পর্য্যন্ত দেবে না। সেদিন সন্ধ্যা হবার ঘণ্টাখানেক আগে দূরবিস্তীর্ণ প্রাস্তরের মধ্যে রাত্রের বিশ্রামের জন্য স্থান নিৰ্ব্বাচন করে নিতে হল। আল্ভারেজ বললে—সামনে কোন গ্রাম নেই—অন্ধকারের পর এখানে পথ চলা ঠিক নয়। একটা স্ববৃহৎ বাওবাব, গাছের তলায় দু টুকরো কেম্বিস্ ঝুলিয়ে ছোট্ট একটু তাবু খাটানো হল। কাঠকুটো কুড়িয়ে আগুন জালিয়ে রাত্রের খাবার তৈরী করতে বসল শঙ্কর। তারপর সমস্ত দিন পরিশ্রমের পর দুজনেই শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ল। অনেক রাত্রে আলভারেজ ডাকলে—শঙ্কর, ওঠে। শঙ্কর ধড়মড় করে বিছানায় উঠে বসল। আলভারেজ বললে—কি একটা জানোয়ার তাবুর চারিপাশে ঘুরছে—বন্দুক বাগিয়ে রাখে । সত্যিই একটা কোনো অজ্ঞাত বৃহৎ জন্তুর নিঃশ্বাসের শব্দ তাবুর পাতলা কেম্বিসের পর্দার বাইরেই শোনা যাচ্ছে বটে। তাবুর সামনে সন্ধ্যায় যে আগুন করা হয়েছিল—তার স্বল্পাবশিষ্ট আলোকে স্ববৃহৎ বাওবা, গাছটা একটা ভীষণদর্শন দৈত্যের মত দেখাচ্ছে। শঙ্কর বন্দুক নিয়ে বিছানা থেকে নামবার চেষ্টা করতে বৃদ্ধ বারণ করলে। পরক্ষণেই জানোয়ারটা হুড়মুড় করে তাবুটা ঠেলে তাবুর মধ্যে ঢুকবার চেষ্টা করবার সঙ্গে সঙ্গে তাবুর পর্দার ভেতর থেকেই আলভারেজ পর পর দুবার রাইফেল ছড়লে । শব্দটা লক্ষ্য