পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৩৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জন্ম ও মৃত্যু o86. হীরেন বললে—এই গায়েই বাড়ী তোমার বুঝি ? ও-পাড়ায় ? তা ছাগলের কথা কি বলছিলে ? বেশ বলতে পার— কুমী লজ্জার ছুটে পালাল। কিন্তু কুমুদিনীকে আবার কি কাজে আসতে হ’ল। হীরেনের সঙ্গে একটু একটু করে পরিচয় হয়েও গেল। দু'জন দু'জনের গুণের পরিচয় পেয়ে মুগ্ধ! দু’জনেই ভাবে এমন শ্রোতা কখনো দেখিনি। তিন দিন পরে দেখা গেল পিসিমার দাওয়ার সামনে উঠোনে দাড়িয়ে কুমী এবং দাওয়ার খুটি হেলান দিয়ে বসে হীরেন ঘণ্টাখানেক ধরে পরস্পরের কথা শুনচে, হীরেন অনর্গল বকে যাচ্চে, কুমী শুনচে—আর কুমী যখন অনর্গল বকচে তখন হীরেন মন দিয়ে শুনচে । সেবার পাচ ছ'দিন পিসিমার বাড়ী থেকে হীরেন চলে এল । কুমী যাবার সময়ে দেখা করলে না বলে হীরেন খুব দুঃখিত হ’ল, কিন্তু হীরেন চলে যাবার পরে কুমী দু'তিন দিন মন-মরা হয়ে রইল, মুখে হাসি নেই, কথা নেই। বুড়ী পিলিমার প্রতি হীরেনের টানটা যেন হঠাৎ বড় বেড়ে উঠল ; যে হীরেন দু’বছর তিন বছরেও অনেক চিঠিপত্র লেখা সত্ত্বেও এদিকে বড় একটা মাড়াতে না, সে ঘন ঘন পিসিমাকে দেখতে আসতে শুরু করলে। আজ বছর দুই আগের কথা, হীরেনকে পিসিমা বলেছিলেন—হীরু বাবা, যদি এলি তবে আমার একটা উপকার করে যা । আমার তো কেউ দেখবার লোক নেই তোরণ ছাড়া । নরহ্মপুরের ধরণী কামারের কাছে একগাদা টাকা পাব জমার খাজনার দরুন। একবার গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করে টাকাটার একটা ব্যবস্থা করে আয় না বাবা ? হীরেন এসেচে দু'দিন পিসিমার বাড়ী বেড়িয়ে আম খেয়ে ফুৰ্ত্তি করতে। সে জষ্টি মাসের দুপুর রোদে খাজনার তাগাদ করে গায়ে গায়ে ঘুরতে আসেনি। কাজেই নানা অজুহাত দেখিয়ে সে পরদিন সকালেই পরে পড়েছিল। এখন সেই হীরেন স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে একদিন বললে.পিলিমা, তোমার সেই নরমুপুরের প্রজার বাকি খাজনার কিছু হয়েচে । যদি না হয়ে থাকে, তবে এই সময় না হয় একবার নিজেই যাই। এখন আমার হাতে তেমন কাজকৰ্ম্ম নেই, তাই ভাবছি তোমার কাজটা করেই দিয়ে যাই – ভাইপের মুমতি হচ্চে দেখে পিসিমা খৰখুশি । হীরেন সকালে উঠে নরমুপুরে যায়, দুপুরের আগেই ফিরে এসে সেই যে বাড়ী ঢোকে, আর সারাদিন বাড়ী থেকে বার হয় না। কুমীকেও প্রায়ই দেখা যায় পিলিমার উঠোনে, নয় তো আমতলায়, নয়তো দাওয়ায় পইঠাতে বসে হীরুদার সঙ্গে গল্প করতে। কাক-চিল । পাড়ায় আর বসে না । জ্যোৎস্না উঠেচে । কুমী বললে—চললুম হীরা। " —এখনই যাবি কেন, বোস আর একটু—