পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/১০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

wo বিভূতি-রচনাবলী জীবন বড় কষ্টকর । যেমন ধরে দাড়িয়েচে আমার । খোকা মারা না গেলে আজ আমার ভাবনা হে হাজারি ! ভেবেছিলুম কয়লার খনি ইজারা নেবো–কত উৎসাহ ছিল। এখন মনে হয় কার জন্তে করবো ? তাই বলছিলুম, তোমায় দেখে হিংসে হয় । তোমার জীবনে উদ্যম আছে, আশা আছে—আমার তা নেই। আর এই দেখ, এই পাড়াগায়ে একলাটি আছি পড়ে, ভালো লাগে কি ? ভালো লাগে না। কখনো থাকিনি, কিন্তু বাইরে ৪ আর হৈ-চৈ-এর মধ্যে থাকতে ভাল লাগে না। ওই মেয়েটা আছে, কলের গান এনেচে একটা— বাজায়, আমি শুনি । ওর মায়ের জন্যে বেছে বেছে ভক্তি আর দেহতত্ত্বের গান কিনে দিইচি, যদি তা শুনে তার মনটা একটু ভাল থাকে ! মেয়েমানুষ, কষ্টটা লেগেছে তার অনেক বেশী । হাজারি এই দীর্ঘ বক্তৃতার সবটা তেমন বুঝিল না—কেবল বুঝিল, পুত্ৰশোকে বুদ্ধের মাথ৷ খারাপ হইয়া গিয়াছে। সে সহানুভূতিস্থচক দু-চার কথা বলিল। বেশী কথা অনেকক্ষণ ধরিয়া গুছাইয়া বলিতে কখনো সে শেখে নাই, তবুও পুত্ৰশোকাতুর বৃদ্ধের জন্য তাহার সত্যকার দুঃখ হওয়াতে, ভাবিয়া তাবিয়া মনে মনে বানাইয়া কিছু বলিল । হরিচরণবাবু বলিলেন—আর একটু চা খাবে ? —আজ্ঞে না । চা খাওয়া আমার তেমন অভ্যাস নেই, আপনি খান বাৰু। এমন সময় টেপি আসিয়া বলিল—বাবা, যাবে ? হাজারি হরিচরণবাবুর কাছে বিদায় লইয়া মেয়েকে সঙ্গে করিয়া বাহির হইল। জ্যোৎস্না উঠিয়াছে, ভড়েদের বাড়ীর উঠানে রাঙাকাঠ কটিয়াছে—প্লাঙাকাঠের গন্ধ বাহির হইতেছে। সিধু ভড় দাওয়ায় জাল বুনিতেছিল, বলিল—দ-ঠাকুর কনে ছেলেন এত রাত অবদি ? হাজারি বলিল—বাবুর বাড়ী। বাবু ছাড়েন না কিছুতে, চা খাও, কলের গান শোন, শেষে তো টেপিকে না খাইয়ে ছাড়লেন না গিল্পী মা । হাজারির বড় ভাল লাগিয়াছিল আজ সন্ধ্যাট। বড় লোকের বৈঠকখানায় এমন ভাবে বসিয়া চা সে কখনো খায় নাই, থাতির করিয়া তাহার সঙ্গে কোনো বড় লোকে মনের কথাও কখনো বলে নাই। কলের গান তো আছেই। মেয়েকে বলিল—টেপি কি খেলি রে ? টেপি একটু ভোজনপ্রিয় ! খাইতে ভালবাসে আর গরীবের মেয়ে বলিয়াই অতসীর মা তাহাকে না খাওয়াইয়া ছাড়েন না। বলিল—পরোটা, মাছের ডালনা, স্বজি, পটলভাজা, আলুভাজা— হাজারির স্ত্রী অনেকক্ষণ রায়া সারিয়া বসিয়া আছে, বলিল—এত রাত্তির পজন্ত ছিলে কোথায় সব ? পাড়া বেড়ানো শেষ হয় না যে তোমাদের, বসে বসে কেবল ঘুম আসচে— টে পি বলিল—আমি খেয়ে এসেছি মা, অতসী-দিদির মা ছাড়লেন না কিছুতে। আমি কিছু থাবো না । —হ্যারে, তুই খেয়ে এলি! ওবেলার সেই বালি লুচি তোর জন্তে রয়েচে যে ! লুচি খাবি না ? অনেকদিন ইহাঙ্গের সংসারে এমন সচ্ছলতা হয় নাই যে, লুচি ফেলিয়া ছড়াইয়া ছেলে