পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/৩৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিপিনের সংসার 9్చులి এবং ঘটনা তাহার অপেক্ষ ভাল বুঝিতেছে। অনেক জায়গায় শাস্তি এমন আবিষ্ট ও মুগ্ধ হইয়া পড়িতেছে যে বিপিন কথা বলিলে সে শুনিতে পায় না। একবার দেখিল শাস্তি আঁচল দিয়া চোখের জল মূছিয়া কাদিতেছে। বিপিন হাসিয়া বলিল,—ও কি শাস্তি ? কান্না কিসের? শাস্তি হাসিকান্না মিশাইয়া বলিল,—আপনার যেমন কঠিন মন, আমার তো অমল নয়, ছেলেটার দুঃখ দেখলে কান্না পায় না ? —তা হবে। আমার চোখের জল অত সস্তা নয়। —তা জানি। আচ্ছা, আমি মরে গেলে আপনি কাদবেন ? —ও কথা কেন ? ও সব কথা থাক । শাস্তি খপ করিয়া বিপিনের হাত ধরিয়া অনেকটা অাদার এবং খানিকট আদরের স্বরে বলিল,—না বলুন। বলতেই হবে। বিপিন হাসিয়া বলিল—নিশ্চয়ই কাদবো । —সতি ? —মিথ্যে বলচি ? পরক্ষণেই সে শাস্তির সঙ্গে কোনো ভালবাসার কথা না বলিবার সঙ্কল্প ভুলিয়া গিয়া বলিয়া ফেলিল,—আমি মরে গেলে তুমি কাদবে ? শান্তি গম্ভীর মুখে বলিল,—অমন কথা বলতে নেই। —না, কেন আমার বেলায় বুঝি বলতে নেই। তা শুনবো না, বলতেই হবে । —না, ও কথার উত্তর নেই। অন্য কথা বলুন। —এর উত্তর যদি না দাও, তোমার সঙ্গে আর কথা বলবো না । —না বলবেন, না বলবেন । —বলবে না ? —না, আমি তো বলে দিয়েচি । অগত্যা বিপিন হাল ছাড়িয়া দিল । মনে মনে ভাবিল-শাস্তি বেশ একটু একগুয়েও আছে, যা ধরিবে, তাই করিবে । ইণ্টারভ্যালের সময় শাস্তি বাহিরে আসিয়া বলিল-সবাই চা খাচ্ছে, আপনি চ খাননি তো বিকেলে, খান না চা, আমি পয়সা দিচ্চি— —তুমি কেন দেবে! আমার কাছে নেই নাকি-চল দুজনে খাবো। শাস্তির একগুয়েমি আরও ভাল করিয়া প্রকাশ পাইল । সে বলিল,—সে হবে না, আপনার চা খাওয়ার পয়সা আমি দেবে, নয়তো আমি চা খাবো না। বিপিন দেখিল ইহার সহিত তর্ক করা বৃথা, অগত্য তাহাতেই রাজি হইয়া দুজনে চায়ের স্টলে একখানা বেঞ্চের উপর বলিল। শাস্তি বলিল, আপনি ওই যে বোতলের মধ্যে কি রয়েচে, ওই দুখানা নিন—শুধু চ আপনাকে খেতে দেবো না। o