পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/৩৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૭૨૭ বিভূতি-রচনাবলী বোধ হয় খুব ভাল লাগিতেছিল, সে আগ্রহের সহিত শুনিতেছিল এ সব কথা । খানিকক্ষণ স্থজনে চুপচাপ। মিনিট পাঁচ ছয় কাটিয়া গেল। বিপিন হঠাৎ বলিল,—কি কথা মনে হচ্ছে জানো শাস্তি ? শাস্তি যেন সলজ আগ্রহের সহিত বলিল,—কি ? —সেই মতি বাগিনীর কথা । শাস্তির মুখে নিরাশা ও বিস্ময় একই সঙ্গে ফুটিল। অবাক হইয়া বলিল,—কেন, তার কথা কেন ? বিপিন ভাবিল, যদি মানী আজ থাকিত, এ প্রশ্ন করিত না। মনের খেলা বুঝিতে তার মত মেয়ে বিপিন আজও কোথাও দেখে নাই । তবুও বলিল,—তুমি দেখনি শাস্তি, কি করে সে মরেচে, সেই শীতের রাত, গায়ে লেপ কাথা নেই, খড় বিচুলি আর ছেড়া কথার বিছানা। অথচ কত অল্প বয়সে“আমি এখানে দাড়িয়ে চোখ বুজলে সেই জেয়াল-বল্লভপুরের বিল, সেই চাদের আলে, বিলের ধারে চিতা, চিতার এদিকে আমি, ওদিকে বিশ্বেশ্বর, এসব চোখের সামনে দেখতে পাই— কিন্তু শাস্তি বুঝিল । শাস্তি যে উত্তর দিল, বিপিন তাহা আশা করে নাই। বলিল— ডাক্তারবাবু, সে জায়গাটা আমায় একবার দেখিয়ে আনবেন তো? সেদিন আপনার মুখে ওর সব কথা শুনে পৰ্য্যন্ত আমিও ভুলতে পারিনি। হোক নীচু জাত, ওই একটা জিনিসে বড্ড উচু হয়ে গেছে। চলুন, ওই বেঞ্চিখানায় বসি একটু। —আবার বসবে কেন ? রাত হোল, বাসায় ফিরি। —আমার পা ধরে গিয়েচে । ওখানে কি বিক্রী হচ্চে ? চা? আর একটু চা খান— — আমি আর নয় । তোমার জন্তে আনবো । —তবে পান কিনে অক্সিন, আমার জন্যে আমি বলিনি। আপনি চা ভালবাসেন, তাই বলছিলাম । পানের দোকান নিকটে নাই, কিছু দূরে প্ল্যাটফর্মের ওদিকে। শাস্তিকে বেঞ্চে বসাইয়া বিপিন পান আনিতে গিয়া হঠাৎ এক জায়গায় দাড়াইয়া গেল । আপ প্ল্যাটফৰ্ম্ম হইতে কিছু সরিয়া ওভারব্রিজের কাছে একটি মেয়ে তাহার দিকে পিছন ফিরিয়া একটা ট্রাঙ্কের উপর বসিয়া আছে তাহার আশেপাশে আরও দু-একটা ছোটখাট স্বটকেস, বিছানা, আরও কি কি । এইমাত্র যে ট্রেনখানা গেল, সেই ট্রেন হইতেই নামিয়া থাকিবে, বোধ হয় সঙ্গের লোক বাহিরে গাড়ী ঠিক করিতে গিয়াছে, মেয়েটি জিনিস আগুলিয়া বসিয়া আছে । মেয়েটি অবিকল মানীর মত দেখিতে পিছন হইতে। সেই ভঙ্গি, সেই সব •••কতকাল কাটিয়া গিয়াছে, এখনও তাহার মত অন্ত মেয়ে দেখিলেও তাহারই কথা মনে পড়ে।... এই সময় মেয়েটি একবার পিছনের দিকে চাহিল। বিপিন চমকিয়া উঠিল।