পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/২৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নবাগত ર૭S আচ্ছা, আজ তার লতিদিকে বলতে ইচ্ছে হচ্চে-কই লতিধি, তুমি এত বই পড়ে টরে বসে আছ, এত সব নাম জান—কই তোমার ত আজও বিয়ে হ’ল না। আমার জীবনে এত বড় একটা আশ্চধ্যি কাও ত টুকু করে ঘটে গেল । ধানের নিন্দে কর, বাবার গোলায় ধান ছিল বলে ত আজ—কই তোমাদের ত— তারপর ম্যাট্রিক পাশ বর। এ গায়ে পাশ করা ছেলে একমাত্র অাছে মুখুজ্যেদের জীবন দা'। সে নাকি দুটো পাশ—কোথায় চাকুরী করচে যেন—ঐ দিকে কোথায়। যার সঙ্গে বিয়ের কথা হচ্চে, সে মুখ্য নয়। পাশের খবর বেরুবার দেরি নেই—বাবা বলেন, স্ববোধ নিশ্চয়ই পাশ করবে। হে ভগবান, তাই করে, পাশ যেন সে করে, সত্যনারাণের সিন্নি দেবে সে শ্বশুরবাড়ী গিয়ে । নাপিত এসে বললে—ম ঠাকরুণ, ও-বাড়ী থেকে দেখে এলাম। গায়ে হলুদের লগ্ন বেলা দশটার পর । আপনাদের যা দিতুে হবে তার আগে দিয়ে দেবেন। গায়ে হলুদের তত্ত্ব আসবে ওবাড়ী থেকে। কি রকম জিনিসপত্র না জানি আসে । পুটির মনটা চঞ্চল হয়ে উঠল। একখানা লাল কাপড় নিশ্চয়ই তার দেবে। পুটির মোটে তিনখানা শাড়ী আর একখানা ডুরে শাড়ী আছে মায়ের বাক্সে তোলা। এবার তার অনেক কাপড় হবে, গহনাও হবে। পাচ ভরি সোনা দেবার কথাবাৰ্ত্তা হয়েচে । এতদিন দুটি দুল ছাড়া অন্য কোনও গহনা তার অঙ্গে ওঠে নি—অথচ ঐ কুমারী মেয়ে লতিদিরই হাতে ছ’গাছা করে চুড়ি, গলায় লকেটু ঝোলানো হার, কানে পাশা, হাতে আংটিও আছে। ও থাকতো শহরে, সেখানে মেয়েদের চালচলন আলাদা । এ সব পাড়াগায়ে কুমারী মেয়ের কাচের চুড়ি ছাড়া আবার কি গহনা পরে ? অত পয়সাও নেই তার বাপের । গোলায় ছুটাে ধান আছে মাত্র, নগদ পয়সা কোথায় । যা কিছু করতে হয়, সে ঐ ধান বেচে । ভীষণ বৃষ্টি এসেচে। সঙ্গে সঙ্গে সামান্য ঝড় । রান্নাঘরের ছাচতলায় দাড়িয়ে বকৃন বাছুরটা ভিজচে । কচুপাতার জল জমে আবার গড়িয়ে গড়িয়ে পড়চে। তাদের কৃষাণ বীর মুচি বলচে–ও দিদি ঠাকুরোণ, তা একটু তামাক দ্যাও মোরে, বিয়েবাড়ী যে মনেই হচ্চে না। দু'দশ ছিলিম তামাক পোড়বে তবে ত বোঝবো ৰে নগনশা লেগেচে । পুটি বীরুকে ধমক দিয়ে বললে—যা, তোর আর বক্তৃতা দিতে হবে না। তামাক আমি কোথায় পাবো ? কাকীমার কাছে গিয়ে চাইগে যা— একটু বেলা হয়েচে । বাড়ীতে অনেক লোক এসেচে বিয়ের জন্যে। বিয়েবাড়ীর মত দেখাচ্চে বটে—কুমোরপুরের কাকীমা, পাচঘরার মাসীম তাদের ছেলেমেয়েদের নিয়ে এসেচেন—আজ বেলা এগারোটার সময়ে আরও একদল আসবে, ইট্টিশানে গাড়ী গিয়েচে। । মেয়েরা সবাই দল বেঁধে নদীতে নাইতে গেল। কুমোরপুরের কাকীমা যাবার সময়ে তাকে বলে গেল--বড়িয্যে বাড়ী পিড়ি চিত্তির করতে দিয়ে আসা হয়েচে, দেখে আসিস পুটি সে-দুখানা পিড়ি হয়েচে কি-না। یه که কাকীমার এটা অন্যায় কথা। তার লঙ্গ করে না ? নিজের বিয়ের পিড়ি নিজে বুঝি