পাতা:বিভূতি রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড).djvu/৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিভূতি-রচনাবলী ক্ষেত্রবাৰু কালীঘাটের ট্রামে উঠিয়া পড়িলেন। যত্নবাৰু দলবল সমেত এদিকের গাড়িতে উঠিলেন। খিদিরপুরের ট্রাম হইতে নামিয়া ছেলেরা হৈ-হৈ করিয়া জুর দিকে ছুটিল। যন্থবাৰু দু অনেকবার দেখিয়াছেন, তিনি কি ছেলেদের দলে মিশিয়া হৈ-হৈ করিবেন এখন ? একটা গাছের তলায় বসিলেন, পড়িয়া দেখিলেন, গাছের নাম পুত্রনজীর রক্সবাঞ্জি’—জীবপুত্রীকা বৃক্ষ। এই বৃক্ষের ফলের বীজ মৃতবৎসা নারীর গলায় পরাইয়া দিলে ছেলে হইয়৷ মরে না। তাহার the খুতবৎসা। এখন ফল লইয়। গেলে কেমন হয় ? বয়স অনেক श्झेग्ना গিয়াছে। বোধ হয় স্ববিধা হইবে না।...কী চমৎকার ওই ছেলেটা ! প্রজ্ঞাব্রত, যেমন নাম, তেমনই দেখিতে। ছেলে যদি হইতে হয়, প্রজ্ঞাত্রতের মত। একটি ছেলের দল সন্মুখ দিয়া যাইতেছিল, তাছাকে দেখিয়া বলিল, তার, আমাদের একটু দেখাবেন ? —কী দেখাব ? —স্তার, অনেক পাখি-জানোয়ারের নাম লেখা আছে, বুঝতে পারছি নে। একটু আন্ধন না স্তার। —হঁ্যা, আমার এখন ওঠবার শক্তি নেই । তোরা নিজেরা গিয়ে দেখগে যা। প্রজ্ঞাব্ৰত কোথায় রে ? —অন্য দিকে গিয়েছে স্যার, দেখছি নে। যাই তবে স্তার। যদুবাৰু আপন মনে বসিয়া বসিয়া হিসাব করিলেন। সাহেব ছেলেদের টিফিনের জন্য পাঁচ টাকা দিয়াছে—ছেলে মোট ত্রিশ জন, ছেলে-পিছু দুই টুকরো রুটি আর একটু মাখন দিলে টাকা দেড়-দুই খরচ। বাকী টাকা পকেটস্থ করা যাইবে । নগদে আড়াই টাকা লাভ। ফিরিবার পথে ছেলের দল অনেকে সরিয়া পড়িল এদিক ওদিক। কেহ গেল ময়দানে হকিখেলা দেখিতে, কেহ কাছাকাছি অঞ্চলে কোন মাসী-পিসীর বাড়ী গিয়া উঠিল। যদুবাৰু মনে মনে হিসাব করিয়া দেখিলেন, দেড় টাকার মধ্যে বাকী ছেলেদের রুটি মাখন ভাল করিয়াই চলিবে। নিউ মাৰ্কেটু হইতে নিজেই তিনখানা বড় রুটি ও কিছু মাখন কিনিলেন, মিউজিয়ম হইতে বাহির হইয়া মাঠে ঘসাইয়া ছেলেদের খাওয়াইয়া দিলেন। - ছেলেরা পাছে আবার ট্রামের পয়সা চাহিয়া বসে, এই ছিল যদুবাবুর ভয়। কিন্তু ছেলেরা বৈকালবেলা মুক্তির আনন্দে কে কোথায় চলিয়া গেল। ছেলেরা অত হিসাব বোঝে না, হেডমাস্টার ট্রামের পয়সা দিয়াছিলেন কি না—সে কৈফিয়ৎ কেহ লইল না। যন্ধুবাবু এক বাসার দিকে চলিতে চলিতে সতৃষ্ণ নয়নে ধৰ্ম্মতলার মোড়ে মোৰ রেস্ট রেন্টের দিকে চাহিলেন। চপ-কাটলেট-ভাজার স্বরুচি-স্ত্ৰাণ ফুটপাথের দক্ষিণ হাওয়াকে মাতাইয়াছে। পকেটে নগদ আড়াই টাকা উপরি-পাওনা-বাড়ীর একঘেয়ে সেই ডাটাচচ্চড়ি আর কুমড়োভাঙ্গা খাইতে খাইতে যৌবন চলিয়া গেল। যদি পেটে ভাল করিয়া না খাইলাম তবে চাকুরি করা কী জন্ত চক্ষু বুজিলে সব অন্ধকার। ছেলে নাই, পিলে নাই, কাহার জন্য খাটিয়া মর! রেস্ট-রেন্টে চুকিয়া দুইখানা ফাউল কাটলেট, দুইখান চুপ, এক প্লেট কোর্শ্ব, ছুইখানা