t মগরার গঞ্জে কয়েকটা পিতলের কাজার কারখানা ছিল। এ পাড়ার চাড়ালদের মেয়েরা মাটির ছাঁচ তৈরী করিয়া সেখানে বিক্রি করিয়া আসিত। অসহ দুঃখের জালায় বিরাজ তাহদেরই একটি মেয়েকে ডাকিয়া ছাঁচ তৈরী করিতে শিখিয়া লইয়াছিল। সে তীক্ষ্ম বুদ্ধিমতী এবং অসাধারণা কৰ্ম্মপটু, দুদিনেই এ বিদ্যা আয়ত্ত করিয়া লইয়া সর্বাপেক্ষা উৎকৃষ্ট বস্তু প্ৰস্তুত করিতে লাগিল। ব্যাপারীরা আসিয়া এগুলি নগদ মূল্য দিয়া কিনিয়া লইয়া যাইত। রোজ এমনই করিয়া সে আট আনা দশ আনা উপাৰ্জন করিতেছিল, অথচ স্বামীর কাছে লজ্জায় তাহ প্ৰকাশ করিতে পারিত না। তিনি ঘুমাইয়া পড়িলে, অনেক রাত্রে নি:শব্দে শয্যা হইতে উঠিয়া আসিয়া এই কাজ করিত। আজ রাত্রেও তাঁহাই করিতে আসিয়াছিল এবং ক্লান্তিবশতঃ কোন এক সময়ে সেইখানে ঘুমাইয়া পড়িয়াছিল। নীলাম্বর হঠাৎ ঘুম ভাঙ্গিয়া শয্যায় কাহাকেও দেখিতে না পাইয়া বাহিরে আসিয়া দাড়াইল। বিরাজের হাতে তখনও কাদা মাখা, আশে-পাশে তৈরী ছাচি পড়িয়া আছে এবং তাঁহারই একধারে হিমের মধ্যে ভিজা মাটির উপরে পড়িয়া সে ঘুমাইতেছে। আজ তিন দিন ধরিয়া স্বামী-স্ত্রীতে কথাবাৰ্ত্তা ছিল না । তপ্ত অশ্রুতে তাহার দুই চোখ ভরিয়া গেল, সে তৎক্ষণাৎ বসিয়া পড়িয়া বিরাজের ভূলুষ্ঠিত সুপ্ত মাথাটি সাবধানে নিজের কোলের উপর তুলিয়া লইল । বিরাজ জানিল না, শুধু একটিবার নড়িয়া চড়িয়া পা দুটি আরও একটু গুটিাইয়া লইয়া ভাল করিয়া শুইল। নীলাম্বর বা হাত দিয়া নিজের চোখ মুছিয়া ফেলিয়া অপর হাতে অদূরবর্তী স্তিমিত দীপটি আরও একটু উজ্জল করিয়া দিয়া একদৃষ্টি পত্নীর মুখের পানে চাহিয়া রহিল। এ কি হইয়াছে।। কৈ, এত দিন সে ত চাহিয়া দেখে নাই! বিরাজের চোখের
পাতা:বিরাজবৌ - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৬০
অবয়ব