পাতা:বিলাতযাত্রী সন্ন্যাসীর চিঠি - ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায়.pdf/৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪০
বিলাত-প্রবাসী

নরশ্রেষ্ঠ যিনি ভূমা অনন্ত সর্ব্বময় একত্বে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত রাখিয়া ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নামরূপময় বহুত্বের মধ্যে ঈশ্বররূপে বিচরণ করেন। প্রকৃতি তাঁহার সেবা করে বটে কিন্তু প্রকৃতির সম্বন্ধে তিনি বদ্ধ নহেন। তিনি সকল সম্ভোগ সকল ঐশর্য্যকে তুচ্ছ করিয়া আত্মস্থিত হইয়া বিরাজ করিতে পারেন। প্রকৃতির ঐশ্বর্য্য তাঁহার নিকট কেবল বাহুল্য মাত্র। উহার থাকা না থাকা তাঁহার পক্ষে দুইই সমান। হিন্দু একত্বের ভিতর দিয়া বহুত্বকে দেখে—তাই সম্ভোগবিজড়িত বহুলতার প্রয়োজন তাহার চক্ষে অকিঞ্চিৎকর বলিয়া প্রতীত হয়। যেখানে পূর্ণ আত্মস্থিতি সেখানে অনাত্ম বস্তুর প্রয়োজনীয়তা থাকিতে পারে না। নিষ্কাম ঈশ্বরত্ব লাভ হিন্দুর আদর্শ।

আজ হিন্দু জাতি এই উচ্চ আদর্শ হইতে ভ্রষ্ট হইয়াছে। তথাপি পূর্ব্ব সাধনার লক্ষণ এখনও বর্ত্তমান। হিন্দু গৃহস্থের ঘরে প্রকৃতির সঙ্গে অতি অল্পই প্রয়োজন দৃষ্ট হয়। তাহার আচার-ব্যবহার আদান-প্রদান কঠোর সংযম দ্বারা নিয়মিত। সংসারের ভোগৈশ্বর্য্যকে লাঞ্ছিত করিয়া যেন তাহার দৈনিক কার্য্যের সমাধান হয়। গৃহস্থ ছাড়িয়া নৃপতির প্রাসাদে যাও—দেখিবে ঐশ্বর্য্যের ছড়াছড়ি—মণি মুক্তা হীরাজহরৎ শালদোশালা কিংখাপে প্রকোষ্ঠ সকল সমাকুল। সেই সকল ধনরত্নবসনভূষণ কিন্তু বাহুল্যরূপে বিরাজিত। রাজা উহাদের অধীন নহেন। সে সকল কখন ব্যবহার করেন কখন বা পরিহার করেন। ঐশ্বর্য্যের আধিক্যে প্রয়োজন কোথায় পলায়ন করিয়াছে। রাজার মহিমা-বর্দ্ধনের জন্যই মণি-মাণিক্যাদির কেবল প্রয়োজন—অভাব পূরণের জন্য নহে। হিন্দুর হয় সম্ভোগসামগ্রীর অল্পতা—শাদাসিধে চালচলন—নয় ত ছড়াছড়ি বাড়াবাড়ি বাহুল্য আড়ম্বর। প্রয়োজনের সুদীর্ঘ পরম্পরায় নিগড় হিন্দুকে বাঁধিয়া রাখে না।