পাতা:বিলাতযাত্রী সন্ন্যাসীর চিঠি - ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায়.pdf/৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সন্ন্যাসীর চিঠি।
৪১

কিন্তু য়ুরােপে ইহার বিপরীত ভাব। য়ুরােপীয় গৃহস্থের ঘরে খুটিনাটি সামগ্রীর আদি অন্ত নাই―সসাগরা পৃথিবী। সেই ক্ষুদ্র নরদেবতাকে যেন কর প্রদান করিয়াছে। কিন্তু সেই সকল সামগ্রী গৃহস্বামীকে প্রয়ােজনের রজ্জু দিয়া বাঁধিয়া রাখে। যা না ব্যবহার করিলেও চলে এমন বস্তু বড় একটা দেখা যায় না। সমস্তই কাজের তালিকায় লেখা। তথায় বাহুল্যের হিসাবে পেটিকায় পুঁজি করিবার অবসর অতি অল্পই আছে। য়ুরােপীয়ের ঘরে দেবাসুর বিজয়ী পঞ্চভূত অশেষ প্রকার রূপ ধরিয়া দাসত্ব করে বটে কিন্তু প্রবৃত্তির কোষাগার হইতে তাহাদের পাওনা গণ্ডা সুদে আসলে আদায় করিয়া লইতে ছাড়ে না। প্রকৃতি যেমন ইংরেজের দাস আসলে সাহেবও তদ্রূপ প্রকৃতির দাস।

ধান ভানিতে শিবের গীত গেয়ে ফেলেছি। ঘণ্টা দুই বেড়িয়ে আমরা সহরে ফিরে এলাম। গ্রামগুলি দেখে কেবল আমার মনে হোতে লাগিল যে এখানে একটা বাঙ্গালীর আড্ডা করিলে মন্দ হয় না। ছাত্রেরা গ্রাম থেকে অনায়াসেই ঊক্ষপারে পড়িতে আসিতে পারে—কেন না বড় বড় ঘােড়ার গাড়ি সদাই যারায়াত করিতেছে। ব্যবসায়ীরাও থাকিতে পারেন। লণ্ডন ও এখান হইতে বারমিংহাম দেড় ঘণ্টার পথ। একটি ছােট গ্রামের মতন হােলে ইংরেজের মুখামুখি দাঁড়ান যায়।

সে দিন একটি ছেলে নেচে নেচে গেয়ে গেয়ে ভিক্ষা করিতেছিল। গানের সঙ্গে সঙ্গে একর্ডিয়ন বাজাইতেছিল। বােধ হােলো বৈষ্ণবের ছেলে যেন গাহিতেছে। বড় মিষ্টি সুর। আহা—তার নাকে যদি একটি তিলক থাকিত তা হােলে সােনায় সােহাগা হােতো। এখানে শুধু ভিক্ষা করিবার যাে নাই। তবে গান গেয়ে বা বাদ্য বাজিয়ে ভিক্ষা করিতে পারা যায়। একজন অন্ধ একঠি ছােট মেয়ের হাত ধোরে রাস্তা দিয়ে গাহিতে গাহিতে যায়। পাড়া একবারে মাতিয়ে তুলে। ইংরেজের সুরে