পাতা:বিলাপ - অমৃতলাল বসু.pdf/৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিদ্যাসাগরের স্বর্গে আবাহন।
১১

দেন, সেখানে বিধবার বদনে প্রশান্ত বিষাদ দেখিতে পাইবে, কিন্তু দৈহিক লালসায় নব পতি অভিলাষ নয়নে লক্ষিত হইবে না। আর বিদ্যাসাগর হিন্দু-শাস্ত্র-সাগর মন্থন করিয়াই বিধবা বিবাহের ব্যবস্থা স্থির করিয়াছিলেন; যে শাস্ত্রকারের মত তিনি অবলম্বন করিয়াছিলেন, তাহা সর্ব্ববাদীসম্মত নহে; সংস্কৃত ব্যাকরণের স্থিতিস্থাপকতা গুণে ও ব্যাখ্যা কারীগণের পাণ্ডিত্য প্রভায় তাহার উদ্ধৃত শ্লোকচয়ের বিপরিতার্থও করা যায় সত্য, কিন্তু এ কথা বোধ হয় যে র্তাহার শত্রুরাও বলিবে না, যে বিদ্যাসাগর মহাশয় করুণার বশে দৃঢ় বিশ্বাসে ঋষি বাক্যে নির্ভর না করিয়া, পাশ্চাত্য প্রথার দৃষ্টান্তে আধুনিক উৎকট সমাজসংস্কারকদের প্রবৃত্তির বশীভূত হইয়া বিধবার বিবাহে উদ্যোগী হইয়াছিলেন। আচারে ব্যবহারে নিষ্ঠায় ক্রিয়ায়, আজ কাল আজীবন কয়জন তাহার ন্যায় হিন্দুধর্ম্ম প্রতিপালন করিতেছে? আর পরিচ্ছদ—এই যে জাতীয়তা জাতীয়তা হিন্দুত্ব হিন্দুত্ব—দুইপাত ইংরাজী পড়িলেই সকলই কোট পেণ্টুলেনের কবলগত হয়; কিন্তু ইংরাজি ভাষায় প্রগাঢ় অধিকার সত্ত্বেও রাজ প্রসাদকে তুচ্ছ করিয়া বিদ্যাসাগর মহাশয় সেই চিরপ্রচলিত ব্রাহ্মণপণ্ডিতের বেশে আজীবন ক্ষেপণ করিয়া গিয়াছেন। মাতা পিতাকে অন্নে বঞ্চিত করিয়া, সপাদুকা দেবগৃহে উপবেশন করতঃ যবন-জন-প্রিয়-পক্ষী-মাংস সংযোগে ম্লেচ্ছান্ন ভোজন করিয়া বিধবা বিবাহের বিরোধী পরিচয়ে হিন্দু নাম ক্রয় করা অপেক্ষা, বিদ্যাসাগরের ন্যায় পবিত্র জীবনযাপন করিয়া ব্রহ্মচর্য্যপালনক্ষমা বালিকা বিধবার বিবাহ দেওয়া সহস্ৰগুণে শ্রেয়ঃ।