পাতা:বিশ্বকোষ ঊনবিংশ খণ্ড.djvu/১১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

লক্ষণ ব্যাকুল, ঐ ধৰ্ম্ম আমার নিকট নিতান্ত অধৰ্ম্ম বলিয়া মনে হয়। স্ত্রীর বশীভূত হইয়া নিরপরাধ পুত্রকে বনবাস দেওয়া-ইহাই কি সত্য, ইহাই কি ধৰ্ম্ম ? আমি আজই বাহুবলে আপনার অভিষেক সম্পাদন করিব। দেখি, কাহার সাধ্য আমার শক্তি প্রতিরোধ করে ? আজ পুরুষকারের অঙ্কুশ দিয়া উদাম দৈবহন্তীকে আমি স্ববশে আনিব। যাহা আপনি দৈবসংজ্ঞায় অভিহিত করিতেছেন, তাহা আপনি অনায়াসে প্রত্যাখ্যান করিতে পারেন, তবে কি নিমিত্ত তুচ্ছ অকিঞ্চিৎকর দৈবের প্রশংসা করিতেছেন ?” লক্ষ্মণের এই ওজস্বিতাপূর্ণ পুরুষকাভিব্যক্তিতে ভরতের মত করুণরসের স্নিগ্ধতা ও স্ত্রীলোকস্থলভ খেদপুর্ণ কোমলতা নাই। উহা সতত দৃঢ়, পুরুষোচিত ও বিপদে নির্ভীক । কোনরূপ অবস্থাবিপর্যয়ে লক্ষ্মণ নমিত হইয়া পড়েন নাই। বিরাধরাক্ষসের হস্তে সীতাকে নিঃসহায়ভাবে পতিত দেখিয়া রামচন্দ্র “হায়, আজ মাতা কৈকেয়ীর আশা পূর্ণ হইল” বলিয়া অবসর হইয়া পড়িলেন। লক্ষ্মণ ভ্রাতাকে তদবস্থ দেখিয়া ক্রুদ্ধ সৰ্পের ন্তায় নিশ্বাস ত্যাগ করিয়া বলিলেন—“ইন্দ্রতুল্য পরাক্রান্ত হইয়া আপনি কেন অনাথের স্থায় পরিতাপ করিতেছেন ? আমুন, আমরা রাক্ষসকে বধ করি।” - শেলবিদ্ধ লগাণ পুনর্জীবন লাভ করিয়া যখন দেখিতে পাইলেন, রাম তাহার শোকে অধীর হইয়া সজলচক্ষে স্ত্রীলোকের মত বিলাপ করিতেছেন, তখন তিনি সেই কাতর অবস্থাতেই রামকে এরূপ পৌরুষহীন মোহপ্রাপ্তির জন্ত তিরস্কার করিয়াছিলেন। বিরহের অবস্থায় রামের একান্ত বিহবলতা দেখিয়া তিনি ব্যথিতচিত্তে রামকে “আপনি উৎসাহশূন্ত হইবেন না” “আপনার এরূপ দৌৰ্ব্বল্যপ্রদর্শন উচিত নহে” “পুরুষকার অবলম্বন করুন” ইত্যাদিরূপ উপদেশ দিয়া বলিয়াছিলেন“দেবগণের অমৃতলাভের স্তায় বহু তপস্তা ও কৃচ্ছসাধন করিয়া মহারাজ দশরথ আপনাকে লাভ করিয়াছিলেন, সে সকল কথা আমি ভরতের মুখে শুনিয়াছি-আপনি তপস্তার ফলস্বরূপ । যদি বিপদে পড়িয়া আপনার স্তায় ধৰ্ম্মাত্মা সহ্য করিতে ন৷ পারেন, তবে অল্পসত্ব ইতর ব্যক্তিরা কিরূপে সহ্য করিবে ?” রামের জ্ঞাতসারে হউক বা অজ্ঞাতসারে হউক, যে কেহ অন্তায় করিয়াছে, লক্ষ্মণ তাহী ক্ষমা করেন নাই, এ কথা পূৰ্ব্বেই বলিয়াছি। দশরথের গুণরাশি তাহার সমস্তই বিদিত ছিল, ক্রোধের উত্তেজনায় তিনি যাহাই বলুন না কেন, দশরথ যে পুত্ৰশোকে প্রাণত্যাগ করিবেন, এ কথাও তিনি পূৰ্ব্বেই অনুমান করিয়াছিলেন, তথাপি তিনি দশরথকে মনে মনে ক্ষম করেন নাই। সুমন্ত্র বিদায়কালে যখন লক্ষ্মণকে জিজ্ঞাসা করি লেন, “কুমার, পিতৃসকাশে আপনার কিছু বক্তব্য আছে কি ?” [ ১১৯ ] লক্ষণ তখন লক্ষ্মণ বলিলেন, “রাজাকে বলিও, রামকে তিনি কেন বনে পাঠাইলেন, নিরপরাধ জ্যেষ্ঠপুত্রকে কেন পরিত্যাগ করিলেন, তাহা আমি বহু চিন্তা করিয়াও বুঝিতে পারি নাই। আমি মহা রাজের চরিত্রে পিতৃত্বের কোন নিদর্শন দেখিতে পাইতেছি না। আমার ভ্রাতা, বন্ধু, ভর্তা ও পিতা, সকলই রামচন্দ্র।” ভরতের প্রতি তাহার গভীর সন্দেহ ছিল। কৈকেয়ীর পুত্ৰ ভরত যে মাতার ভাবে অনুপ্রাণিত হইবেন, এ সম্বন্ধে তাহার অটল ধারণা ছিল, কেবল রামের ভৎসনার ভয়ে তিনি ভরতের প্রতি কঠোরবাক্য প্রয়োগে নিবৃত্ত থাকিতেন। কিন্তু যখন জটাবন্ধকেশকলাপ অনশনকৃশ ভরত রামের চরণ প্রান্তে পড়িয়া ধূলিলুষ্ঠিত হইলেন, তখন লক্ষ্মণ তাহাকে চিনিতে পারিয়া সলঙ্গস্নেহপরিতাপে ম্রিয়মাণ হইলেন। একদিন শীতকালের রাত্রে বড় তুষার পড়িতেছিল, শীতাধিক্যে পক্ষিগণ কুলায়ে গুষ্ঠিত হইঙ্গছিল, ভরতের জন্য সেই সময় লক্ষ্মণের প্রাণ র্কাদিয়া উঠিল, তিনি রামকে বলিলেন-"এই তীব্র শীত সহ করিয়া ধৰ্ম্মাত্মা ভরত আপনার ভক্তির তপস্যা পালন করিতেছেন। রাজ্য, ভোগ, মান, বিলাস, সমস্ত ত্যাগ করিয়া নিয়তাহারী ভরত এই ভীষণ শীতকালের রাত্রিতে মৃত্তিকায় শয়ন করিতেছেন। পারিব্রজ্যের নিয়ম পালন করিয়া প্রত্যহ শেষরায়িতে ভরত সরযুতে অবগাহন করিয়া থাকেন। চিরমুখোচিত রাজকুমার শেযরাত্রের তীব্র শীতে কিরূপে সরযুতে স্নান করেন।” এই লক্ষ্মণ পুৰ্ব্বে ভরতের প্রতি অতিক্রোধ প্রকাশ করিয়াছিলেন। কিন্তু যেদিন বুঝিতে পারিলেন, তিনি বনে বনে ঘুরিয়া রামের যেরূপ সেবায় নিরত, অযোধ্যার মহাসমৃদ্ধির মধ্যে বাস করিয়াও ভরত রামভক্তিতে সেইরূপ কৃচ্ছসাধন করিতেছেন, সেই দিন হইতে র্তাহার স্বর এইরূপ স্নেহার্ড ও বিনম্র হইয়া পড়িয়াছিল। কিন্তু তিনি কৈকেয়ীকে কখনই ক্ষমা করেন নাই, রামের নিকট এক দিন বলিয়াছিলেন, “দশরথ যাহার স্বামী, সাধু ভরত যাহার পুত্র, সেই কৈকেয়ী এরূপ নিষ্ঠুর হইলেন কেন ?” শরৎকাল উপস্থিত হইল, কিন্তু প্রতিশ্রুতির অনুযায়ী উদযোগের কোন চিহ্ন না পাইয়া রাম সুগ্ৰীবের প্রতি ক্রুদ্ধ হইলেন,— গ্রাম্যমুখে রত মূৰ্খ সুগ্ৰীব উপকার পাষ্টয়া প্রত্যুপকারে অবহেলা করিতেছে। রাম লক্ষ্মণকে সুগ্ৰীবের নিকট পাঠাইয়া দিলেনবন্ধুকে স্বীয় কর্তৃব্যের কথা স্মরণ করাইয়া উদ্যোগে প্রবর্কিত করিবার জন্ত যে সকল কথা কহিয়া লি তন্মঙ্গ্য ক্রোধস্থচক কয়েকটি কথা ছিল— যে পথে বালী গিয়াছে, সে পথ সঙ্কুচিত হয় নাই ; মুগীব, যে প্রতিজ্ঞা করিয়াছ, তাহাতে সুপ্রতিষ্ঠ হও, বালীর পথ অনু