পাতা:বিশ্বকোষ ঊনবিংশ খণ্ড.djvu/১৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

লাখনৌ কারণ তৎপুত্র স্বজ উদ্দৌলা (১৭৫৩ খৃঃ) বক্সার যুদ্ধের পর, ফৈজাবাদেই বাস করিতেন। তিনি লাখ নেী নগরে না থাকায় নগরের কোনরূপ সৌষ্টৰ সাধিত হয় নাই । • অযোধ্যার এই নবাববংশের প্রথম তিনজন রাঞ্জাই যোদ্ধা ও প্রসিদ্ধ রাজনৈতিক ছিলেন । র্তাহারা ইংরাজ, মহারাষ্ট্র ও রোহিল্লা এবং দিল্লীর প্রধান প্রধান অমাত্যদিগের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিয়া বিশেষ খ্যাতি অর্জন করিয়াছিলেন। নিরন্তর যুদ্ধবিগ্রহে লিপ্ত থাকায় তাহার রাজ্যশাসন ব্যতীত রাজ্যের স্থাপত্যশিল্পের কোনরূপ ঔৎকর্ষ সাধন করিতে পারেন নাই। কেবলমাত্র সামরিক বিভাগের উপযোগী দুর্গমালা, কুপসমূহ ও সেতু প্রভৃতি নিৰ্ম্মাণে তাহদের চিত্ত্ব আকৃষ্ট ছিল। চতুর্থ নবাব আসক উদ্দৌলা হইতে লাখনোঁর রাজনৈতিক চিত্র পরিবর্তিত হইল । তিনি ইংরাজরাজের বন্ধুত্ব লইয়া সুখী হইলেন। ইংরাজ সেনার সাহায্যে তিনি রোহিলখণ্ড অধিকার করিয়া বারাণসী পর্য্যন্ত আপনার শাসন বিস্তার করিতে সচেষ্ট হইলেন। এইরূপে সমৃদ্ধি সঞ্চয় করিয়া তিনি মনে মনে স্বীয় শক্তির গুরুত্ব উপলব্ধি করিয়া লইলেন এবং বিশেষ উদ্যমসহকারে ও বহুল অর্থব্যয়ে নানা সেতু ও মসজিদ এবং লাখনো সহরের গৌরবকীৰ্ত্তি ও স্থাপত্যবিষ্ঠার প্রকৃষ্ট নিদর্শন প্রসিদ্ধ ইমাম্বাড়া নামক প্রাসাদ স্থাপন করিয়াছিলেন । এই প্রসিদ্ধ অট্টালিকা দিল্লী ও আগ্রার ইমাম্বাড়ার স্থায় খাট মুসলমান ধরণে গঠিত না হইলেও ‘রূমিদরবাজা’ নামক মসজিদের সংলগ্ন থাকায় সৌন্দর্যের পরাকাষ্ঠা লাভ করিয়াছে। ইহার গঠন সাদাসিধা ও গাম্ভীৰ্য্যপূর্ণ, ইহাতে গ্রীক ও ইতালীয় গঠনের অনেক সোসাত আছে। ১৭৮৪ খৃষ্টাব্দের মহামারীতে অন্নাহারক্লিষ্ট প্রজাবৰ্গকে পারিশ্রমিক দিয়া তদ্বিনিময়ে এই ইমাম্বাড়া নিৰ্ম্মিত হইয়াছিল। প্রবাদ, অনেক মান্তগণ্য নগরবাসী অর্থাভাবে ইমামবাড়ানিৰ্ম্মাণকার্য্যে যোগদান করিয়াছিলেন। র্তাহাদের পারিশ্রমিক গভীর রাত্রে প্রদান করা হইত, কারণ দিবাভাগে একত্র বেতন লইতে আসিলে অপরের চিনিবার সম্ভাবনা ছিল। ঐ অট্টালিকার একটা প্রকোষ্ঠ ১৬৭ ফিট, x ৫২ ফিট লম্বা, উহাতে প্রায় এক কোটি টাকা ব্যয় হয়। এই গৃহের দেওয়ালে চাকচিক্যশালী ও প্রভাসম্পন্ন যে সকল চারুশিল্প চিত্রিত হইয়াছিল, এক্ষণে কেবল তাহার চিহ্নমাত্র রহিয়াছে, মূলদ্রব্য স্থানভ্রষ্ট বা অপহৃত হইয়া সাধারণের দৃষ্টি বহির্ভূত হইয়া পড়িয়াছে। উক্ত স্থান দুর্গসীমার মধ্যে থাকায় ইংরাজরাজ এক্ষণে তাহাতে অস্ত্রাদি রক্ষার ব্যবস্থা করিয়াছেন। আশ্চর্য্যের বিষয় এই যে, XVII [ ১৯৭ ] ". আসিয়া বাস করিতেন । লাখনে অট্টালিকায় কাষ্ঠের কোনরূপ শিল্প খোদিত হয় নাই। ফাগুসন সাহেব ইহার খিলানাদির বিশেষ প্রশংসা করিয়া গিয়াছেন। ইমামবাড়া ব্যতীত রূমীদরবাজাও আসফ উদ্দৌলার একটা প্রধান কীৰ্ত্তি। তৎপরে দুর্গের পশ্চিমস্থ নদীতীরবর্ত্তী দৌলৎ, খানা নামক প্রাসাদ। উহাই পরে ইংরাজরাজের রেসিডেন্সীতে পরিণত হইয়াছিল। গোমতী-তীরবর্তী এই মুবুহৎ অট্টালিক লাখনেীর একটা গৌরবস্থল। নবাব সয়াদং আলী ফর হৎবক্স নামক সুরম্য প্রাসাদে আপনার বাসভবন স্থানাস্তরিত করিলে, এই অট্টালিকায় ইংরাজ রেসিডেন্টের বাসভবন নির্দিষ্ট হয়। নগরের বহির্ভাগে ও নদীর অপরপারে নবাব আসফ উদ্দৌলা-প্রতিষ্ঠিত বিবিয়াপুর নামক প্রাসাদ । নবাব বাহাদুর মৃগয়ায় বহির্গত হইলে প্রথমে এই গ্রাম্য-ভবনে এতদ্ভিন্ন নগরের অপরাপর স্থানে ও এই নবাবের উদযোগে নিৰ্ম্মিত আরও অনেক অট্টালিকা বিদ্যমান আছে। সেগুলির গঠনপারিপাট্য ও দৃশ্ব-গাম্ভীৰ্য্য লাখনে নগরের মহত্ত্ব জ্ঞাপন করিতেছে। এই সময়ে সেনাপতি ক্লড় মাটিন Mai tiniere RțRYF স্বপ্রসিদ্ধ বিদ্যালয় স্থাপন করেন। উক্ত সুবৃহৎ উষ্ঠানবাটিকা সম্পূর্ণরূপ ইতালীয় শিল্পে বিনিৰ্ম্মিত হইয়াছিল। পাছে মুসলমানরাজ ঐ অট্টালিকা হস্তগত করিয়া লন, এই ভয়ে তাহার মধ্যে স্থাপয়িতার অস্থি সমাহিত করা হয়,কিন্তু সিপাহীবিদ্রোহের সময় মুসলমানগণ সেই সমাধি খুড়িয়া অস্থিগুলি বাহিরে ছড়াইয়া ফেলে। • আসফ উদ্দৌলার রাজত্বকালে লাখ নেী-রাজদরবার স্ট্রাক জমকের শীর্ষসীমায় উন্নীত হইয়াছিল, এই সময়ে রাজ্যসীমার বৃদ্ধি সহকারে রাজস্বেরও যথেষ্ট বৃদ্ধি ঘটিয়াছিল, নবাব আসফ উদ্দৌলা স্বীয় বদান্ততা ও জঁাকজমকের বশবৰ্ত্তী হইয়। রাজকোষে সঞ্চিত সেই প্রভূত রাজস্ব প্রাচ্যসমৃদ্ধির উপকরণ ংগ্রহে ব্যয় করিয়া গিয়াছিলেন । পাশ্চাত্য ঐতিহাসিকগণ বলেন যে, যুরোপে বা ভারতবর্ষে আসফ, উদ্দৌলার গৌরবময় কীৰ্ত্তিকলাপের সমকক্ষতা দেখাইতে কোন রাজাই এতাধিক অর্থব্যয়ে স্বরাজ্যে স্থাপত্যগৌরব সম্পাদন করিতে পারেন নাই । তাহার উচ্চাভিলাষ তাহাকে সাধারণ সীমার বহির্ভূত করিয়াছিল । তৎকালীন প্রসিদ্ধ মুসলমানরাজ টিপু সুলতান বা নিজাম যাহাতে হস্তী বা হীরকাদি সম্পত্তিতে তাহার স্তায় ঐশ্বৰ্য্যবান না হইতে পারেন, তদ্বিষয়ে তাহার বিশেষ লক্ষ্য ছিল । তাহার বিখ্যাত পুত্র উজীর আলী খাঁর (যিনি মিঃ চেরির হত্যাপরাধে চুণার দুর্গে বন্দী থাকিয়া ভবলীলা সম্বরণ করেন ) বিবাহ সমরোহে তিনি বরযাত্রীদিগের সঙ্গে ১২শত হস্তী পাঠাইয়াছিলেন ।