অঙ্গো বঙ্গঃ কলিঙ্গশ্চ পুণ্ড্রঃ সুহ্মশ্চ তে সুতাঃ।
তেষাং দেশাঃ সমাখ্যাতাঃ স্বনামপ্রথিতা ভুবি॥
অঙ্গস্যাঙ্গো ভবেদ্দেশো বঙ্গো বঙ্গস্য চ স্মৃতঃ॥
কলিঙ্গবিষয়শ্চৈব কলিঙ্গস্য চ স স্মৃতঃ॥
পুণ্ড্রস্য পুণ্ড্রা প্রখ্যাতা সুহ্মা সুহ্মস্য চ স্মৃতাঃ।
এবং বলেঃ পুরা বংশঃ প্রখ্যাতো বৈ মহর্ষিজঃ।”
এই বঙ্গ হইতে বাঙ্গালা জনপদের প্রতিষ্ঠা হয়।
২ কার্পাস। (মেদিনী) ৩ বার্ত্তাকু।
বঙ্গজ (ক্লী) বঙ্গাৎ ধাতুবিশেষাৎ জায়তে ইতি জন-ড। ১ সিন্দূর। (ত্রি) ২ বঙ্গদেশ জাত। ৩ বঙ্গদেশবাসী কায়স্থ, বৈদ্য প্রভৃতি জাতির শ্রেণীবিভাগভেদ। ইহা দক্ষিণ-রাঢ়ীয় শ্রেণীর অন্যতম শাখা বলিয়া পরিচিত। ঐ শাখা বঙ্গদেশের পূর্ব্বাঞ্চলে আসিয়া বাস করায় বঙ্গজ আখ্যা প্রাপ্ত হইয়াছে।
৪ পিত্তল।
বঙ্গজীবন (ক্লী) রৌপ্য।
বঙ্গদেশ (পুং) স্বনামপ্রসিদ্ধ ভারতীয় দেশভাগ। ভারতের উত্তরপূর্ব্বাংশে হিমালয় পাদ হইতে দক্ষিণে সমুদ্রতট পর্য্যন্ত বিস্তৃত। বঙ্গভূমি, বঙ্গরাজ্য, বাংলা বা বাঙ্গালা নামে পরিচিত। ভারতবর্ষের পূর্ব্বোত্তর প্রান্তবর্ত্তী পুণ্যতোয়া গঙ্গানদীপ্রবাহিত ‘ব’ দ্বীপাংশ লইয়া এই রাজ্য গঠিত। বহু প্রাচীন কাল হইতেই এই মহাসমৃদ্ধ জনপদের বাণিজ্যখ্যাতি সুদূর আরব ও চীনসাম্রাজ্য পর্য্যন্ত ব্যাপ্ত ছিল এবং এতদ্দেশবাসীর জ্ঞানবত্তা ও বুদ্ধিমত্তার পরিচয় এবং শিল্পাদি বিভিন্নবিষয়িণী কলাবিদ্যার প্রখর প্রভাব চতুর্দ্দিকে রাষ্ট্র হইয়াছিল। বৈদেশিক বণিক-সম্প্রদায় সমুদ্রপথে আসিয়া এখানকার সুবর্ণগ্রামাদি বন্দর হইতে এতদ্দেশজাত বহুতর দ্রব্য লইয়া যাইতেন। সেই সময় হইতেই বাঙ্গালার গৌরব দিগন্ত বিস্তৃত হয়। বঙ্গের দক্ষিণপ্রান্তস্থিত সমুদ্রভাগ ও দেশের নামে বঙ্গোপসাগর এবং বঙ্গবাসীও তদবধি বাঙ্গালী নামে বিদিত হইয়াছিল। ভারতবাসী অন্যান্য জাতি হইতে এই বাঙ্গালী জাতির বিদ্যাগৌরব বাঙ্গালাকে স্বতন্ত্র মর্য্যাদা ও সমাদর দান করিয়াছে।
নামনিরুক্তি৷
তবকাৎ-ই-নাসিরি নামক মুসলমান ইতিহাস অনুসরণ করিলে আমরা জানিতে পারি যে, বাঙ্গালার সেনবংশীয় শেষ নরপতি মহারাজ লক্ষ্মণ সেনকে পরাজয়পূর্ব্বক মহম্মদ-ই-বখ্তিয়ার বাঙ্গালা জয় করিয়াছিলেন। তাঁহার আগমনে লক্ষ্মণাবতী, বেহার, বঙ্গ ও কামরূপজনপদবাসিগণ মহাভীত হইয়াছিলেন।[১] মার্কো পোলো (১২৯৮ খৃ:) লিখিয়াছেন, ১২৯০ খৃষ্টাব্দ পর্য্যন্ত বাঙ্গালা বিজিত হয় নাই। বঙ্গ উক্ত জনপদ চতুষ্টয়ের দক্ষিণভাগে অবস্থিত ছিল।[২] উক্ত দুইটী বিবরণী পাঠ করিলে বেশ বুঝা যায় যে, মুসলমান সমাগমের পূর্ব্বে প্রাচীন বঙ্গরাজ্য চারি খণ্ডে বিভক্ত হইয়া পড়িয়াছিল। মার্কোপোলো তাহারই দক্ষিণাংশকে বাঙ্গালা বলিয়া উল্লেখ করিয়া গিয়াছিলেন। রসিদ্উদ্দীন্ বলেন, আনুমানিক ১৩০০ খৃষ্টাব্দে বঙ্গ দিল্লীশ্বরের অধীন হয়। ১৩৪৫ খৃষ্টাব্দে ইবন্ বতুতা বঞ্চাল (বাঙ্গালা) রাজ্যের ও তথাকার ধান্য-প্রাচুর্য্যের উল্লেখ কবিয়াছেন। তিনি আরও বলেন যে, খোরাসানবাসী এতৎপ্রদেশকে বিবিধ উৎকৃষ্ট দ্রব্য-পরিপূর্ণ নগর বলিত।[৩] সুপ্রসিদ্ধ কবি হাফিজের (১৩৫০ খৃঃ) কবিতায় বাঙ্গালায় উল্লেখ দেখা যায়।[৪] ভাস্কো দা-গামা ১৪৯৮ খৃঃ বাঙ্গালার মুসলমান প্রাধান্য এবং এখানকার কার্পাস ও রেশমী বস্ত্র, রৌপ্য প্রভৃতির বাণিজ্য দ্রব্যের উল্লেখ করিয়াছেন। তিনি বলেন, সুবাতাসে ৪০ দিনে কলিকট্ট হইতে বাঙ্গালায় আসা যায়।[৫] এতদ্ভিন্ন ১৫০৬ খৃষ্টাব্দে লিওনাদ্দো, ১৫১০ পৃষ্টাব্দে বার্থেমা ও ১৫১৬ খৃষ্টাব্দে বার্ব্বোসা বাঙ্গালা রাজ্যের ও তদ্দেশবাসীর বাণিজ্যাদি বিবরণ লিপিবদ্ধ করিয়া যান। আবুল ফজলকৃত আইন্-ই-অক্বরী নামক মুসলমান ইতিহাসে বাঙ্গালা শব্দের একটী ব্যুৎপত্তি প্রদত্ত হইয়াছে। তিনি লিখিয়াছেন যে, প্রাচীন কালে এই জনপদ বঙ্গনামে উল্লিখিত হইত। বঙ্গের পূর্ব্বতন হিন্দুরাজগণ পর্ব্বতপাদমূলস্থ নিম্নভূমিতে মৃত্তিকার বাঁধ বা আল দিতেন। বাঙ্গালার বহুস্থানে উক্ত রাজন্যবর্গের বিনির্ম্মিত ঐরূপ বহুশত আল বিদ্যমান দেখিয়া আলযুক্ত বঙ্গ অর্থে ‘বঙ্গাল’ নামকরণ হইয়াছে। সম্রাট্ অরঙ্গজেব বাঙ্গালার ——