সমৃদ্ধি লক্ষ্য করিয়া দৰ্পের সহিত বলিয়া গিয়াছেন যে, এই স্থান সকল জাতির পক্ষে স্বর্গ তুল্য।[১] ১৬৯০ খৃষ্টাব্দে ওভিংটন লিখিয়াছেন যে, বাঙ্গালা রাজ্য আরাকানের উত্তর পশ্চিমে অবস্থিত। চট্টগ্রাম বাঙ্গালার দক্ষিণপূর্ব্ব সীমান্তে বিদ্যমান।
বঙ্গ নামের উৎপত্তি এবং এই রাজ্যের স্থিতি ও প্রতিষ্ঠা সম্বন্ধে প্রাচীন গ্রন্থাদিতে যেরূপ বিবরণ পাওয়া যায়, তাহ পুরাবৃত্তপ্রসঙ্গে বিবৃত হইয়াছে। লুই বার্থেমা এবং অপরাপর পর্ত্তুগীজ ভ্রমণকারিগণ চট্টগ্রামের সন্নিকটে বাঙ্গালা নামে একটী নগরের উল্লেখ করিয়াছেন।[২] প্রাচীন মানচিত্রে তাহার স্থান নির্দ্দেশ রহিয়াছে।[৩] অধিক সম্ভব, বার্থেমা বাঙ্গালায় পদার্পণ করেন নাই, তিনি মলবার উপকূলে থাকিয়াই, আরবীয় বণিকদিগের প্রথানুবর্ত্তী হইয়া দেশের নামানুসারে বাঙ্গালার প্রধান নগরের নাম বাঙ্গালা লিখিয়া যান; কিন্তু ঐ বাঙ্গালা নগরের কোন নিদর্শন বিদ্যমান নাই। বোধ হয়, পর্ত্তুগীজগণ বাঙ্গালার প্রধান বন্দর চট্টগ্রামে আসিয়া তাহার দক্ষিণ উপকণ্ঠস্থিত একটী গণ্ডগ্রামকে বাঙ্গালীর বাসভূমি জানিয়া চট্টগ্রামকেই বাঙ্গাল-নগর নামে অভিহিত করিয়া থাকিবেন।[৪]
সীমা ও বিভাগ।
——
- ↑ Stavorinus, Vol I. p. 29In.
- ↑ Varthema লিখিয়াছেন, “আমি Banghella নগর পরিদর্শন করিয়াছি।” (Varthema 210) কিন্তু তিনি যে কালিকট ও কোচীন ভিন্ন অপর কোথাও পদার্পণ করেন নাই, তাহা গার্সিয়া ডি ওর্টার লেখনীতে বিবৃত রহিয়াছে। (Colloquios, f. 30)
- ↑ A chart of 1743 in Dalrymples Collection.
- ↑ “Arracan……is bounded on the North West by the kingdom of Bengala, some Authors making Chatigam to be its first Frontier City; but Teixeira, and generally the Portugues, writers, reckon that as a City of Bengala; and not only so, but place the City of Bengala itself……more South than Chatigam. Tho I confess a late French geographer has put Bengala in his catalogue of imaginary Cities.” Ovington, (1690) 554.
ইহার উত্তর সীমা নেপাল ও ভোটান রাজ্য, পূর্ব্বে আসাম এবং চীন ও উত্তর-ব্রহ্মের সীমান্তবর্ত্তী অনাবিষ্কৃত পার্ব্বত্য বনভাগ; দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর, মান্দ্রাজ ও মধ্য প্রদেশ; পশ্চিমে মধ্যভারতীয় এজেন্সীর অধিত্যকা ভূমি। এই অধিত্যকা ভূমিই বাঙ্গালা ও যুক্ত প্রদেশের সীমান্ত রেখারূপে কল্পিত হইয়া থাকে। বাঙ্গালা বরাবর এক জন ছোটলাটের শাসনাধীন ছিল, বিগত ১৬ই অক্টোবর হইতে দুই জন ছোটলাটের অধীন হইয়াছে।
মুসলমানগণ বঙ্গবিজয় করিয়া গাঙ্গেয় বদ্বীপকেই সংস্কৃত নামানুসারে বঙ্গ বলিয়া অভিহিত করেন। কোন কোন মুসলমান ঐতিহাসিক রাজধানী লক্ষ্মণাবতীর নামানুসারে এই প্রদেশকে লক্ষ্মণাবতী বলিয়া বর্ণনা করিয়া গিয়াছেন। গৌড় ও লক্ষ্মণাবতী-ধ্বংসের পর যখন রাজপাট ঢাকা ও নবদ্বীপে স্থানান্তরিত হয়, তখনও নিম্নবঙ্গ বাঙ্গালা বলিয়া পরিগণিত থাকে। তৎপরে মুসলমানগণ পূর্ব্বাঞ্চলে ব্রহ্মপুত্রতীর পর্য্যন্ত অধিকার করিয়া বাঙ্গালার সীমা বৃদ্ধি করেন। দিল্লীর অধীনস্থ আফগান শাসনকর্ত্তারা এবং তৎপরবর্ত্তী স্বাধীন আফগান নৃপতিবর্গের রাজ্যশেষে মোগলসম্রাট্ অকবর শাহের বিখ্যাত সেনাপতি মানসিংহ বাঙ্গালা মোগল সাম্রাজ্যভুক্ত করেন। রাজা টোডরমল্লের জরীপের পর রাজস্ব আদায়ের সুবিধার জন্য বঙ্গ, বেহার ও উড়িষ্যা লইয়া একটী সুবা গঠিত হয় এবং সেই সুবেগুলি হইতে আবার জেলা, সরকার ও পরগণা প্রভৃতি বিশেষ বিশেষ বিভাগ নির্দ্দিষ্ট হইয়াছিল। এই সুবে বাঙ্গালা শাসনের জন্য দিল্লীশ্বরের অধীন একজন শাসনকর্ত্তা নবাব বাঙ্গালায় থাকিতেন। এই শেষোক্ত নবাব বংশপরম্পরায় মুর্শিদাবাদের নবাব বলিয়া পরিচিত। একজন নবাব দ্বারা এই বিস্তৃত ও মহাসমৃদ্ধিশালী জনপদের রাজস্ব আদায়ের সুবিধা না হওয়ায়, তাঁহার অধীনে বেহার, উড়িষ্যা ও ঢাকায় এক একজন নায়েব-নাজিম (Deputy governor) রাখিবার ব্যবস্থা হইয়াছিল।
