• বঙ্গদেশ (ইলয়াস বংশ ) [ ৪৩৪ ] বঙ্গদেশ (ইলয়াস বংশ ) গ্রহণপূর্বক গৌড়সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হইলেন। তদনন্তর তিনি পুৰ্ব্ববঙ্গে আসিয়া স্নবর্ণগ্রামের শাসনকৰ্ত্ত ফখর উদ্দীনকে আক্রমণ করিলেন । ফখর উদ্দীন ধূত ও নিহত হইলেন (১৩৪২ খৃঃ)। তিনি কয় বৎসর মাত্র রাজত্ব করিয়া গতাসু চইলে, তৎপুত্র মুজঃফর গাজি শাহ পূৰ্ব্ববঙ্গের ( সুবর্ণগ্ৰাম ) সিংহাসনে আরোহণ করেন। এদিকে পশ্চিম বাঙ্গালায় আলিউদ্দীন আলী শাহ স্বাতন্ত্র্য অবলম্বন করিয়া, গৌড়সন্নিহিত পা ধুয়া নামক স্থানে রাজধানী স্থাপন করিলেন। তাহার ঐশ্বৰ্য্য দেখিয়া হাজি ইত্যাস বা ইলায়স খুজা তাহার প্রতিদ্বন্দ্ব হইলেন। এই স্বত্রে উভয়ে অনেকবার যুদ্ধ ঘটে, পরিশেষে আলী শাহ পরাস্ত হইয়াও নিষ্কৃতি লাভ করেন নাই। ঈর্ষাপরবশ ইলয়াস গোপনে তাহাকে নিহত করিয়ু বৈরজাল শাস্তি করিলেন । আলী মুবারক এক বৎসর পাচ মাস কলমাত্র রাজত্ব করিয়াছিলেন । পাণ্ডুয়। ইলয়াসেব হস্তগত হইল। তিনি ইলয়াস খাজ৷ সামসউদ্দীন ভাঙ্গর নাম ধারণ করিয়া বাঙ্গালার মসনদে উপবিষ্ট হইলেন। কয়েক বৎসর পরে সামস উদ্দীন পুৰ্ব্ববাঙ্গালী আক্রমণ ও অধিকার করেন (১৩৫৩ খৃষ্টাব্দ ) । এই সময়ে ত্রিপুরারজিওঁ তাহার নিকট পরাজিত হইয়া রাজকর ও নজর দিতে বাধ্য হন । অনস্তুর তিনি পশ্চিমে বারাণসী পর্য্যন্ত রাজ্যবিস্তার করিতে চেষ্টা করেন। ইহাতে সম্রাট, তৃতীয় ফিরোজ শাহ ক্রুদ্ধ হইয়া তাহার বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রা করিলেন। সমাটের সহিত যুদ্ধে ইলয়াস্পুত্র বন্দী হইলেন, পাণ্ডুয়া অধিকৃত হইল। এই সময়ে সামস্ উদ্দীন পা ধুয়া হইতে ১১ ক্রোশ দূরে একডাল নামক দুর্গে । আশ্রয় গ্রহণ করেন । সম্রাট, উক্ত দুর্গ অবরোধ করিয়া যখন দেখিলেন যে, সহজে উহা হস্তগত হুইবে না, তখন তিনি সন্ধি করিয়া দিল্লীতে প্রস্থান করিলেন ( ১৩৫৩ খৃষ্টাব্দে ) । ইহার { অত্যন্ত্রকাল পকে বাদশাহ বাঙ্গালার স্বাধীনতা স্বীকার করেন (১৩৫৭ খৃষ্টাব্দে। এই সময়ে বাঙ্গালারাজ্যের সীমা উত্তর-বিহারে গণ্ডক নদ পর্য্যন্ত বিস্তৃত হইয়াছিল । কএক বৎসর বিশেষ বলদৰ্পে রাজ্যশাসন করিয়া সামসউদ্দীন ৭৬০ হিজিরায় গতানু হন ( ১৩৫৮ খৃ: ) । তিনি স্বীয় ভুজবলে সমগ্র বঙ্গের অধীশ্বর হইয়াছিলেন । তাহার সময়ে রাজপাট গৌড়রাজধানী হইতে মালদহের নিকটবৰ্ত্তী পাণ্ডুয়া নগরে স্থানান্তবিত হইয়াছিল । হাজীপুর নগর তিনি স্বনামে প্রতিষ্ঠা করেন। প্রসিদ্ধি আছে যে তিনি হিন্দুধৰ্ম্মেরও বিশেষ পক্ষপাতী ছিলেন। একডালার নিকট রাজা ভবানী নামে এক সাধুর বাস ছিল। সম্ৰাট্ ফিরোজকর্তৃক একডাল অবরোধকালে ঐ সাধুর মৃত্যু হয়। সাধুবরের প্রতি ঐকান্তিক ভক্তিনিবন্ধন সুলতান সামস উদ্দীন ফকিরবেশে তাহার সমাধি স্থলে উপনীত হইয়াছিলেন এবং সেই ছদ্মৰেশেই সম্রাটু-শিবিরে আসিয়া সম্রাটের সহিত সাক্ষাং कब्रिध्न यांन । 4. J. সামস উদ্দীনের মৃত্যুর পর ১৩৪৮ খৃষ্টাকে তাহার জ্যেষ্ঠ “সেকন্দর শাহ” উপাধি গ্রহণপূর্বক রাজা হন । এই সময়ে ফিরোজ শাহ পুনর্কার বাঙ্গালী আক্রমণ করেন, কিন্তু সেকলৰ পিতার অনুবর্তী হইয় একডাল দুর্গে আশ্রয় লন এবং এরূপ যুদ্ধকৌশল দেখান যে, সম্রাট, কয়েকট হস্তী ও কিঞ্চিৎ উপঢৌকন লইয়াই প্রতিনিবৃত্ত হইতে বাধ্য হন (১৩৫৯ খৃষ্টাব্দে) । সেকন্দর একটা প্রকাও বৌদ্ধস্ত,প ধ্বংস করিয়া তাহার উপর বিখ্যাত “আদিনা-মসজিদ" নিৰ্ম্মাণ করেন, পাণ্ডুয়ায় উহার ভগ্নাবশেষ অস্কাপি দৃষ্ট হয়। সেকন্দরের দুই মহিষী ছিল, একের গর্ভেগিয়া উদ্দীন, অপরের গর্তে ১৬টা সন্তান জন্মে। গিয়াস উদ্দীন বিমাতার চক্রে প্রাণ হারাইবার সম্ভাবনা দেখিয়া, সুবর্ণগ্রামে পলাইয়৷ আসেন ও সেনাদল সংগ্রহপূর্বক রাজবিদ্রোহী হন। তথায় কিয়ুং, কাল স্বাধীনভাবে রাজত্ব করিবার পর তিনি সোণার-কোটে আসিয়া শিবির স্থাপনপূর্বক স্বীয় পিতার বিরুদ্ধে গোয়ালপাড়া পৰ্য্যন্ত অগ্রসর হন । পিতাপুত্রের পরস্পরের যুদ্ধে সেকন্দর গুরুতররূপে আহত হইয়াছিলেন, তাহাতেই তাহার মৃত্যু ঘটে ( ৭৬৯ হিঃ = ১৩৬৭ খৃ: ) । গিয়াস উদ্দীন রাজা হইয়া চিরন্তন প্রথামত আত্মরক্ষার্থে বৈমাত্রেয় ভ্রাতাদিগকে অন্ধ করিলেন । ইহা ব্যতীত তাহার জীবনে আর কোন নিষ্ঠুরাচরণের উল্লেখ পাওয়া যায় নাই। তিনি সদ্বিচার দ্বারা সকল লোককে সস্তুষ্ট করিয়াছিলেন । তিনি স্বয়ং কবি, কবির ময্যাদা রক্ষায় সতত: সচেষ্টত ছিলেন । পূৰ্ব্ববাঙ্গালায় রাজত্বকালে তিনি পারসিক কবি হাফেজকে আনিয়া বাস করাইতে বিধিমতে চেষ্ট পান। কিন্তু উক্ত কবি আগমন করেন নাই । ৭৭৫ হিঃ ( ১৩৭৩ খৃ: ) তাহার মৃত্যু ঘটে। কেহ কেহ বলেন যে, তিনি দিনাজপুরের রাজা গণেশ কর্তৃক নিহত হন । এ কথা সত্য হউক বা মিথ্যা হউক, তাহার পুত্র ও পৌত্রের রাজত্বকালে রাজা গণেশ যে অত্যন্ত পরাক্রান্ত হইয়াছিলেন এবং পরিশেষে উক্ত পৌত্রকে বিনাশ করিয়া তিনি যে রাজসিংহাসনে আরোহণ করিয়াছিলেন, তদ্বিষয়ে সন্দেহ নাই। গিয়াস প্রসিদ্ধ মুসলমান সাধু কুতুব উল আলমের সহপাঠী ছিলেন এবং লখনের প্রসিদ্ধ সাধু হামিদ উদ্দীন নিকট তিনি পরমার্থতত্ত্ব শিক্ষা করেন । , গিয়াসের মৃত্যুর পর, অমাত্যবর্গ তাহার পুত্র সৈফ উদ্দীনকে সুলতান উস্ সলাতিন উপাধিসহ বাঙ্গালার মসনদে অভিষিক্ত করেন। সৈফ উদ্দীন নিৰ্ব্বিরোধে ও শাস্তির সহিত বঙ্গরাজ্য শাসন করিয়া ১৩৮৩ খৃষ্টাব্দে গতামু হইলে, তাহার দত্তক পুত্র ২য় স"ি
পাতা:বিশ্বকোষ ঊনবিংশ খণ্ড.djvu/৪৩৪
অবয়ব