পাতা:বিশ্বকোষ ঊনবিংশ খণ্ড.djvu/৪৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্গদেশ (গণেশবংশ ) উীন দুই বৎসর কাল শান্তিময় রাজ্য ভোগ করেন। এই সময়ে ভাতুড়িয়া পরগণার জমিদার রাজা গণেশ (মতান্তরে রাজা ংশ) রাজদ্রোহী হইয়া, বঙ্গসিংহাসন অধিকার করিয়াছিলেন (১৩৮৫ খৃষ্টাব্দে)। মুসলমান সর্দারগণ কেহই তৎকালে বঙ্গেশ্বরের সহায়তা করেন নাই। তৎকালে অপর কয়জন মুসলমান রাজার শাসনোল্লেখ কৃষ্টে অনুমান হয়, মুসলমান সমাজেও রাজ্যাধিকার বিভ্রাটে বিশেষরূপ বিপ্লব উপস্থিত হইয়াছিল। দিল্লীশ্বরের সামর্থ্যহীনতাই বঙ্গীয় রাজবিপ্লবের একমাত্র কারণ। ৮০১ হিজিরায় তৈমুরলঙ্গ ভারত আক্রমণ করেন। ঐ সময়ে দিল্লীশ্বরকে হীনবল দেখিয়া গুজরাত, মালব, কনোজ, অযোধ্যা, কড়া, জৌনপুর, লাহোর, দেবলপুর, মুলতান, সমান, বয়ানা, মহোবা প্রভৃতি স্থানের মুসলমান সর্দারগণ স্বাধীনতা অবলম্বন করেন। খাজা জহানকর্তৃক বেহার,অধিকারের পর বাঙ্গালার অপরাপর মুসলমান সর্দারগণও স্বাধীনভাবে শাসন পরিচালন করিতে চেষ্টা করেন। এই সুযোগে দিনাজপুরপতি গণেশ স্বাধীনতা অবলম্বন করিয়াছিলেন। ১৩৮৬ খৃষ্টাব্দে রাজা গণেশ বাঙ্গালার অধিপতি হন, এবং ৭৮ বৎসর: রাজত্ব করেন । তিনি অপক্ষপাতে রাজ্যশাসন কবিয়া হিন্দু মুসলমান উভয়ের প্রিয় হইয়াছিলেন। তাহার মদ্রায় বিয়াজিদ শাহু’ নাম দৃষ্ট হয়। ১৩৯২ খৃষ্টাব্দে তাহার মৃত্যু ঘটিলে, তাহার পুত্র জিংমল্ল জলাল উদ্দীন মহম্মদ শাহ নাম গ্রহণপূর্বক মুসলমান হন এবং গৌড়নগরে পুনৰ্ব্বার বাজপানী স্থাপন করেন। জলাল গৌড় ও পা ধুয়ায় অনেক সুরম্য হয় নিৰ্ম্মাণ করিয়াছিলেন । তিনি প্রজাপীড়ন করিতেন এবং অবশেষে দুইজন ক্রীতদাসের হস্তে (১৪০৯ খৃষ্টাব্দে) নিহত হন । রাজা গণেশ পুৰ্ব্ববঙ্গে নানা দেবমন্দির স্থাপন করিয়া পৌত্তলিকতার প্রভাব বিস্তার করিয়াছিলেন । কিন্তু তাহার পুত্র ও পৌত্রের ইস্লাম ধৰ্ম্ম গ্রহণে সে স্রোত বাধা প্রাপ্ত হয় । গৌড়নগরে তিনি এবং তাহার পুত্র ও পৌত্র প্রায় চল্লিশ বৎসর রাজত্ব করেন । এ সময়ে বাঙ্গালার পরাক্রম অনেক কমিয়াছিল। উত্তরপূৰ্ব্বে কামরূপ রাজ্য করতোয় পৰ্যন্ত বিস্তুত হইয়াছিল। পশ্চিমে জৌনপুরের সুলতান খাজা জহান সমুদায় বেহার প্রদেশ অধিকার করিয়াছিলেন। ত্রিপুরার রাজাও মধ্যে মধ্যে বঙ্গসীমান্ত আক্রমণ করিয়! জয়লাভ করিতেছিলেন। জলাল উদ্দীনের মৃত্যুর পর, তাহার জ্যেষ্ঠ পুত্র আহ্মদ শাহ বাঙ্গালার মসনদে উপবিষ্ট হন ( ১৪০৯ খৃঃ) । এই সময়ে জৌনপুররাজ সুলতান ইব্রাহিম বাঙ্গালা আক্রমণে উদ্যোগী হইলে বধের তৈমুরপুত্র শাহরুখের সাহায্যপ্রার্থ হইল হিরাটে দূত [ 8७¢ ] বঙ্গদেশ (ইলয়াসবংশ ) 劇 প্রেরণ করেন। তাতার রাজদূত গৌড়রাজধানীতে আগমন কালে জৌনপুরপতিকে স্বীয় সম্রাটের বঙ্গবিজয়-নিষেধাজ্ঞা জ্ঞাপন করিয়া যান। ১৮ বৎসর রাজত্বের পর আহ্মদ ১৪২৬ খৃষ্টাৰো গতাসু হন । আহ্মদের মৃত্যুর পর, মুসলমানের মুলতান সামস উদ্দীনের ংশধর নাসির উদ্দীন নামক একজনকে রাজা করেন। হিন্দুরাজবংশের অভু্যদয়ে মুসলমান সর্দারগণ রাজনৈতিক ব্যাপার হইতে সরিয়া পড়িয়াছিলেন। এখন ভাঙ্গবাবংশের হস্তে রাজ্যরশ্মি নিপতিত হওয়ায় সর্দারগণ রাজসংসারের বলবৃদ্ধি কামনায় রাজসকাশে আসিয়া উপনীত হইলেন । তাছাদের সাহায্যে বলীয়ান হইয়া নসির শাহ ১৪৫৭-৫৮ খৃষ্টাব্দ পর্য্যন্ত নিৰ্ব্বিরোধে রাজত্ব করেন। উক্ত বর্ষে তাহার মৃত্যু ঘটিলে তৎপুত্র বাৰ্ব্বক শাহ রাজ্যাধিকার প্রাপ্ত হন। তাহার নিৰ্ম্মিত গৌড়ের প্রাকারাদি ও প্রবেশদ্বার অদ্যাপি বিদ্যমান আছে। নসির শাহের পুত্ৰ বৰ্ব্বক শাহ স্বীয় রাজ্য ও রাজপ্রাসাদ রক্ষার্থ অনেকগুলি হাবলী ( আবিদিনীয় ক্রীতদাস ) ও খোজ। নিযুক্ত করেন । ইহার ক্রমে আট সহস্র পরাক্রান্ত অশ্বারোহী হইয় উঠে এবং রাজামুগ্ৰহে কেহ কেহ রাজসরকারে উচ্চপদ ও সম্মান লাভ করে । সুলতান বাৰ্ব্বক ১৪৭৪ খৃঃ অঃ পৰ্য্যন্ত নিৰ্ব্বিরোধে রাজ্যশাসন করিয়া গতায় হইলে তাহার জ্যেষ্ঠ পুত্ৰ য়ুসুফ শাহ রাজা হন । রাজাসনে আসীন হইয়াই তিনি স্থায়• বিচারের সুব্যবস্থা করেন এবং রাজবিধির সংস্কার করিয়া যান । কাজী ও মুফতীগণ র্তাহার নিকট বিচারে পরাস্ত হইতেন । ৮৮৭ হিজিরায় অপুত্রক য়ুসুফ গতায় হইলে মুসলমান ওমরাহগণ রাজবংশীয় সেকন্দর শাহ নামক একজন ব্যক্তিকে সিংহাসনে অধিষ্ঠিত করিলেন ; কিন্তু সেকন্দর রাজকাৰ্য্য পরিচালনে অক্ষম দেখিয় তাহারা দুইমাস পরে তাহাকে রাজ্যচ্যুত করিয়া তদীয় খুল্লতাত ফতেশাহকে সিংহাসন অর্পণ করেন। সুলতান ফতেশাহ বিদ্যাদি নানা সদগুণে ভূষিত ছিলেন । তিনি সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হইয়া দেখিলেন, হাবসী ও খোজাগণ পুৰ্ব্ব হইতেই রাজসরকারে আধিপত্য বিস্তার কবিয়াছে। তাহাদের অত্যাচারে নিরীহ বঙ্গীয় প্রজাবর্গের ওষ্ঠাগতপ্রাণ । তিনি ইহার প্রতিবিধান জন্ত কএকজনকে উপযুক্ত শাস্তি দিয় তাহাদের মর্য্যাদার হ্রাস করিয়া দিলেন । ইহাতে তাহার সুলতানের পরম শক্র হইয় দাড়াইল । তাহার রাজপুর-রক্ষী *পাইক”দিগকে প্রলোভিত করিয়া একদিন গভীর নিশীথে রাজাস্তঃপুর মধ্যে সুলতান ফতেশাহকে বধ করিল। রাজসরকারের প্রথামত মুলতান প্রভাতে রাজসভাতলে উপস্থিত হইতেছেন না দেখিয়া সভাস্থ সকলেই উৎকণ্ঠিত হইয়৷