রামচন্দ্র [ ৪৬৩ ] রামচন্দ্র - বলিলে শোভা পায়, দৈববশে আমার গাত্র সংস্পর্শ দোষ হইয়াছে, তজ্জন্ত আমি অপরাধিনী নছি, আমার মনে সৰ্ব্বদা তুমি বিরাজিত আছ। যদি আপনি আমাকে গ্রহণ করিবেন না বলিয়াই স্থির করিয়াছেন, তবে প্রথম যখন হনুমাম্কে লঙ্কায় পাঠাইয়াছিলেন, তখন এ কথা বলিয়া পাঠান নাই কেন ? তাহা হইলে তোহ্মা কর্তৃক পরিত্যক্ত এই জীবন আমি তখনই ত্যাগ করিতাম। তাহা হইলে আপনার ও আপনার সুহৃস্বর্গের এ শ্রমস্বীকার করিতে হুইত না ।” এই বলিয়া সাশ্রনেত্ৰে শোকবিহবলা সীতাদেবী লক্ষ্মণের দিকে চাহিয়া ৰলিলেন, “লক্ষ্মণ, তুমি চিতা সজ্জিত করিয়া দাও । আমি আর এই অপবাদক লঙ্কিন্তু জীবন বহন করিতে ইচ্ছা করি না ।” লক্ষ্মণ রামের মুখের দিকে চাহিয়৷ অসশ্নতির কোন লক্ষণ পাইলেন না। চিত সজ্জিত হইল, সীতা অধোমুথে স্থিত ধৰ্ম্মপাণি রামচন্দ্রকে প্রদক্ষিণ করিয়া জলন্ত অগ্নিতে শরীর আহুতি প্রদান করিলেন। অগ্নিপ্রবেশের সময় সীতা বলিয়াছিলেন—“আমি রাম ভিন্ন অন্ত কাছাকে ও মনে চিন্তা করি নাই, হে পবিত্ৰ সৰ্ব্ব-সাক্ষী হুতাশন, আমাকে অtশ্রয় দান করুন । আমি শুদ্ধচরিত্র, কিন্তু রামচন্দ্র আমাকে দুষ্ট বলিয়া জানিতেছেন, অতএব হে বহি, আমাকে স্থানদান করুন ।” অগ্নিতে স্বর্ণপ্রতিম বিলীন হইয় গেল । সাশ্রনেত্রে ' द्रांभ মুহূৰ্ত্তকাল শোকাতুর হইয়া পড়িলেন ; তখন অগ্নি । সীতাকে রামের নিকট ফিরাইয়া দিয়া গেলেন। দৈবগণ স্বর্গ হইতে নামিয়া আলিয়। রামচন্দ্রের নিকট সীতা সম্বন্ধে নান কথা বলিতে লাগিলেন এবং তাহাকে চক্রধারী নারায়ণ রূপে স্তুতি করিয়া স্বর্গে প্রস্থান করিলেন। রামচন্দ্র ও সীতাকে পুনঃ প্রাপ্ত হইয়া হৃষ্টচিত্তে বলিলেন, “সীতা শুদ্ধচরিত্র, তিনি সতীত্বের প্রভায় আত্মরক্ষা করিয়াছেন, অগ্নিপরীক্ষাই তাহার শাশ্বত প্রমাণ ।” তৎপরে সভ্রাতৃক ও সস্ত্রীক রামচন্দ্র পুষ্পক রথরোহণপূৰ্ব্বক বিভীষণপ্রমুখ রাক্ষসৰ্বদ ও স্বত্রীবপ্রমুখ বানরসৈন্তপরিবৃত হইয়া অযোধ্যাভিমুখে যাত্র করিলেন । পথে সীতার ইচ্ছানুসারে কিষ্কিন্ধ্যার পুরস্ত্রীবর্গকে রথে তুলিয়া লইলেন। বিজয়ী রামচন্দ্রকে লইয়া পুষ্পকরথ আকাশ-পথে চলিতে লাগিল। রামচন্দ্র সীতাকে রথ হইতে চিরপরিচিত দণ্ডকারণ্যের নানা স্বান দেখাইয়া পুৰ্ব্বকথা তাহার স্মৃতিতে জাগরিত করিতে লাগিলেন । বন-গমনের ঠিক চতুর্দশ বর্ষ পরে, রামচন্দ্র ভরদ্ধাজের আশ্রমে উপস্থিত হইলেন। সেখানে যাইয়ু শুনিলেন, ভরত র্তাহার পত্ত্বি কার উপর রাজচ্ছত্র ধারণ করিয়া প্রতিনিধিস্বরূপ নন্দীগ্রামে রাজ্যশাসন করিতেছেন । ভয়ঙ্কাজের আশ্রম হইতে রামচন্দ্ৰ হনুমানকে ছদ্মবেশে ভরতের নিকট গমন করিতে অনুজ্ঞা করিলেন। পথে শৃঙ্গবের-পুরাধিপতি গুহককে তিনি তাছার আগমন-সংবাদ দিয়া যাইতে বলিলেন । হনুমানকে ভয়তের নিকট যাইয় তাহার যুদ্ধবৃত্তাস্ত,গীত-উদ্ধার এবং বিভীষণ ও সুগ্ৰীবের বিরাট মৈত্রসৈম্ভসহ অযোধ্যায় প্রত্যাগমনের কথা শুনাইতে বলিলেন, শেষে বলিয়। দিলেন—“এই সকল কথা শুনিয়া ভরতের মুখভঙ্গী কিরূপ হয়, তাহ ভাল করিয়ু লক্ষ্য করিও ।” যদি কোনও রূপ অপ্রীতি ব্যঞ্জক ভাব লক্ষিত হয়, তাহা হইলে তিনি অযোধ্যায় না যাইয়া ভরতকেই রাজ্য প্রদান করিবেন। হনুমান পথে গুহক রাজকে রামাগমনের শুভ সংবাদ বিজ্ঞাপিত করিয়া অযোধ্য হইতে এক ক্রোশ দূরবর্তী নর্মীগ্রামে উপস্থিত হইলেন। সে স্থানে যাইয়া দেখিলেন ভরত দীন, কৃশ এবং আশ্রমবাসী, তাহার শরীর অমার্জিত ও মলিন, তিনি ভ্রাতৃদুঃখে বিষ। তাছার মস্তকে উন্নত জটাভার এবং পরিধানে বল্কল ও অজিন। তিনি সৰ্ব্বদ। আত্মবিষয়ক ধ্যানমগ্ন এবং ব্রহ্মধির দ্যায় তেজযুক্ত । পাঞ্জকায় নিবেদন করিয়া বসুন্ধর শাসন করিতেছেন। হনুমান যাইয়। তাছাকে বলিগেন—“দণ্ডকারণ্যবাসী চীরজটাধর যে অগ্রাজের জন্য আপনি অসুশোচনা করিতেছেন, তিনি আপনাকে কুশল জানাইয়াছেন।” রামের প্রত্যাগমনের সংবাদে ভরতের চক্ষে বহুদিনের নিরুদ্ধ অশ্রু উচ্ছসিত হইয়া উঠিল । সমস্ত ভোগবিলাস পরিত্যাগ করিয়া যাহার জন্ত তিনি এতদিন কঠোর পারিব্রাজ্য পালন করিয়াছেন, যে রামের কথা স্মরণ করিয়া তাহার হৃদয় শতধা বিদীর্ণ হইয়াছে, এই চতুর্দশবর্ষব্যাপী কঠোর ব্রত পালনের ফলস্বরূপ সেই রামচন্দ্র গৃহপ্রত্যাগত হইতেছেন, এই সংবাদ শুনিয়া তিনি হনুমানকে আলিঙ্গন ররিয়া অশ্রুঞ্জলে অভিষিক্ত করিলেন এবং তাহার জন্য বহু উপচারের সহিত বিবিধ মহার্যপুরস্কারের ব্যবস্থ৷ করিলেন । - সমস্ত সচিববৃন্দপরিবৃত হইয় ভরত রামচন্দ্রের সঙ্গে দেখা করিতে যাত্র করিলেন। তাছার জটার উপরে শ্ৰীয়ামের পাদুক, তদুদ্ধে ছত্রধর বিশাল পাণ্ডুর ছত্র ধারণ করিয়াছিল, ভরত যাই। রামকে বরণ করিয়া আনিলেন এবং স্বহস্তে রামের পদে পাদুকা পরাইয়া দিয়া স্বীয় করে মুস্ত অযোধ্যার রাজ্য ভার অগ্রজের হস্তে প্রদান করিয়া কৃতাৰ্থ হইলেন । রামচন্দ্ৰ শুভদিনে রাজ্যে অভিষিক্ত হইলেন, সুগ্ৰীবকে
পাতা:বিশ্বকোষ ষোড়শ খণ্ড.djvu/৪৬৫
অবয়ব