বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বিশ্বকোষ ষোড়শ খণ্ড.djvu/৭৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রেশম রেশম কাটাইএর জন্ত এখন যুরোপে নানা প্রকার কল প্রস্তুত হইতেছে। মালদহ অঞ্চলে বৎসরে প্রায় ২০০০ মণ থমরু রেশম প্রস্তুত হয়। বীরভূম জেলাতেও যে যে গ্রামে পলু পোখা হয়, সেখানে কিছু কিছু থমরু প্রস্তুত হইয়া থাকে । মালদহের রেশম অপেক্ষ বীরভূমের খমর নিকৃষ্ট। মুর্শিদাবাদ ঞ্জেলায় কান্দির নিকট বসোয়া, বিষ্ণুপুর প্রভৃতি ক একট গ্রামে যে সকল পটুধস্ত্র প্রস্তুত হয়, তাহা বীরভূমের থমক্ক রেশম হষ্টতে। কিন্তু ঐ জেলার মীর্জাপুর প্রভৃতি যে সকল গ্রামে সৰ্ব্বোৎকৃষ্ট কাপড় বোন হয়, তাহাতে মালদহের রেশমই ব্যবহৃত হইয়া থাকে। থমর রেশমের ফলন অধিক হয় । একজন কাটনী বানকী রেশমের তিনগুণ থম, রেশম কাটাই করিতে পারে। বানকী রেশম এককালে কেবল দুই বন্দী প্রস্তুত হয়, কিন্তু থমরু এক কালে ছয় বন্দী হইতে পারে ও কাটাই খরচ অনেক কম পড়ে। রেশমের ইতিহাস । সাধারণের বিশ্বাস যে চীন দেশই রেশমের প্রথম জন্মস্থান, এই চীন হইতেই ভারতে ও যুরোপে রেশম গিয়াছে ; কিন্তু যখন . এ দেশের লোক চীনের নামগন্ধ জানিত না, তাহারাও পুৰ্ব্ব হইতে ভারতে রেশমের ব্যবহার প্রচলিত। এদেশে ধৰ্ম্ম কৰ্ম্মে দেশজাত দ্রব্য ভিন্ন বিদেশী দ্রব্য ব্যবহারের নিয়ম নাই । যাগ যজ্ঞাদি কৰ্ম্ম কালে, সৰ্ব্বত্ৰ পট্টবস্ত্রের ব্যবহার প্রচলিত ইত্যাদি দৃষ্টান্ত দেখিয় কেহ কেহ বলিয় থাকেন যে রেশম বিদেশীয় হইলে এদেশীয়েরা কখনই ধৰ্ম্ম কৰ্ম্মে ব্যবহার করিতেন না । কেহ কেহ “ক্ষেীমে বসনে বসানা” ইত্যাদি বৈদিক প্রমাণ উদ্ধৃত করিয়া বিবাহে ব্যবহৃত উক্ত ক্ষৌম বস্তুকেই রেশমী বন্ধ বলিয়া মনে করেন । কিন্তু প্রাচীন বৈদিক সংহিতাদিতে ক্ষৌম শব্দের উল্লেখ পাওয়া যায় না। পরবত্তী বৈদিক ও স্থতি সাহিত্যে যেখানে ক্ষেীম বস্ত্রের উল্লেখ আছে, সেখানে প্রাচীন টীকাকারের ক্ষৌমশন্ধের শণ নিৰ্ম্মিত বস্ত্র ব্যাখ্যা করিয়াছেন। এরূপস্থলে ধৰ্ম্মশাস্ত্রে পটুবস্ত্রের ব্যবহারের প্রসঙ্গ থাকিলেও বৈদিক সময়ে রেশমের প্রকৃত ব্যবহার ছিল কিনা তৎপক্ষে সন্দেহ । অথৰ্ব্ববেদীয় কৌশিকসূত্রে “ক্ষৌমিকীং বৈশ্বায়’ (৫৭৩) অর্থাৎ বৈশুকে ক্ষুমানিৰ্ম্মিত মেখলা দিবে। এই ক্ষেীম শৰ্ম্ম দেখিয়া ও কেহ কেহ “রেশম” কল্পনা করেন, কিন্তু মনুসংহিতাকার নিজেই ঐ ক্ষৌম শব্দের এইরূপ ব্যাখ্যা করিয়াছেন,—“ক্ষত্রিয়স্ত তু মেীজ্য। বৈশুস্ত শণতান্তী।” (২।৪২) অর্থাৎ বৈণ্ডের শণওস্তুই মেখলা হইবে। ক্ষেীম শবে পট্টবস্ত্র ও বুঝায়, কিন্তু ঐ পট্টবস্ত্রের অর্থ শণের পাট, তাং রেশম হইতে সম্পূর্ণ ভিন্ন । মনুসংহিতা রেশম ও তসর বক্সের স্পষ্ট উল্লেখ পাওয়া যায় যথা— [ १¢ २ ] রেশম “কোঁষোবিকয়ে রূৰৈঃ কুতপানামরিষ্টকৈঃ। শ্ৰীফলৈরংগুপট্রানাং ক্ষেীমাণাং গেীরসর্ষপেঃ ॥” (মতু ৫ ১২০) অর্থাৎ কোষেয় ও পশম লোনামাট দিয়া পরিশুদ্ধ করিবে । অংশুপট্ট বা রেশম শ্ৰীফল দ্বারা এবং গেীরসর্ষপ দ্বারা ক্ষেীমবস্ত্র শোধন করিবে । উক্ত প্রমাণ হইতে ফুই প্রকার রেশমের সন্ধান পাওয়া যাইতেছে। এছুটীর মধ্যে একটা তসর ও অপরটা রেশম । তসর গুটী ইষ্টতে যে নিকৃষ্ট রেশম পাওয়া যাইত, তাহাই কৌষেয় এবং পটু বা বড় পাট নামক পলুর কোষ হইতে যে অংশু পা প্ৰয়া যাইত, তাহাই অংশুপট্ট নামে অভিহিত । মনুসংহিতায় চীন প্রভৃতি জনপদবাসী ভারতবর্ষের অন্তর্গত জাতি বলিয়াই বর্ণিত হইয়াছে । অথচ মমুসংহিতায় চীনাংশুক অর্থাং চীনদিগের নিৰ্ম্মিত স্বস্ব বক্সের কোন উল্লেথ নাই । ইহাতে মনে হয় যে, মহুসংহিতা-রচনাকালে ভারতবর্ষে কোঁধেয় ও অংশুপট্ট নামে যে দুইপ্রকার বস্ত্র প্রচলিত ছিল, তাহ চীনাংশুক হইতে স্বতন্ত্র । মহাভার ৩ রাজস্থয় পৰ্ব্বধায়ে দেখাযায় যে চীনগণ রাজা যুধিষ্ঠিরকে চীনা শুক উপহার দিয়াছিল।-- “প্রমাশরাগষ্পশায়ান বাহুলীচীনসমূদ্ভবম্। উর্ধঞ্চ রাঙ্কবঞ্চৈব পট্টজং কীটজস্তথা ॥” (সভা ৫২২৬ ) সম্ভবতঃ ঐ সময়েই ভারতবর্ষে প্রথম চীনাংশুকের প্রচলন হইয়া থাকিবে। ধৰ্ম্মকৰ্ম্মে ন হইলেও চীনাংশুক ভারতবাসীর বিলাস সামগ্ৰী বলিয়া গণ্য হইয়াছিল। যথা— “চীনাংশু কমিব কেতো: প্রতিবাতং মীয়মানগু” ( কালিদাসের শকুগুলী ১ম অষ্ণু) সম্ভবতঃ চীনাংশুক ভারতীয় রাজন্তবর্গের খিলাসের সামগ্রী বলিয়া গণ্য হইলে চীনজাতীয় পলু এদেশে আনীত ও তাহার প্রতিপালনের ব্যবস্থা হইয়া থাকিবে। সংস্কৃত সাহিত্যে রেশম কীটের নাম পুণ্ডরীক । এখনও মালদহ অঞ্চলে যাহার রেশমকীট পালন করে, তাহারা পুওরাকক্ষে বা পুণ্ড, বা পুড়ে নামে খ্যাত। পুণ্ডরীক শব্দই অপভ্রংশে পোড়, পোলু, পুলু বা পলু হইয়াছে। খৃষ্ট জন্মের বহু শতাব্দী পূৰ্ব্বে পেগু বৰ্দ্ধনের নিকট পুণ্ডরীক নামক এক বণিক শাখার সন্ধান জৈনদিগের কল্পস্থত্রে পাওয়া যায় । মালদহ হইতে গুঁড়া পর্যস্ত এক সময়ে প্রচুর পরিমাৰে রেশম উৎপন্ন হইত ও যথেষ্ট পলুর ব্যবসা প্রচলিত ছিল । এখানে যাহারা পলুর ব্যবস করত, তাহদের মধ্যে এক উচ্চ শ্রেণী জৈনশাস্ত্রে পুণ্ডরীক নামে প্রসিদ্ধ হইয়াছে। সংস্কৃত শাস্ত্রে কেীযেয়, পট্ট, ক্রিমিজপুত্ৰ, কীটতত্ত্ব, কীটপ্পুত্র, কীটজ, কুকুল ও কুণ্ডল এই কয়েকট রেশমের পৰ্য্যায় পাওয়া যায়। উক্ত নাম গুলি দ্বারাও বৈদেশিক