পাতা:বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়

রূপটি একই কালে ভৌমণ্ডলিক রূপ এবং মানস রূপ। ভারতবর্ষের মনকে দেখেছিলেন তাঁরা মনে। সেই বিশ্বদৃষ্টির প্রবল আনন্দে তাঁরা ভারতবর্ষে চিরকালের শিক্ষার প্রশস্তভূমি পত্তন করে দিলেন। সে শিক্ষা ধর্ম্মেকর্ম্মে রাজনীতিতে সমাজনীতিতে তত্ত্বজ্ঞানে বহুব্যাপক। তারপর থেকে ভারতবর্ষ আপন নিষ্ঠুর ইতিহাসের হাতে আঘাতের পর আঘাত পেয়েচে, তার মর্ম্মগ্রন্থি বারম্বার বিশ্লিষ্ট হয়ে গেছে, দৈন্য এবং অপমানে সে জর্জ্জর, কিন্তু ইতিহাস-বিস্মৃত সেই যুগের সেই কীর্ত্তি এতকাল লোকশিক্ষার অবাধ জলসেকপ্রণালীকে নানা ধারায় পূর্ণ ও সচল করে রেখেচে। গ্রামে গ্রামে ঘরে ঘরে তার প্রভাব আজও বিরাজমান। সেই মূল প্রস্রবণ থেকে এই শিক্ষার ধারা যদি নিরন্তর প্রবাহিত না হোত, তাহলে দুঃখে দারিদ্র্যে অসম্মানে দেশ বর্ব্বরতার অন্ধকূপে মনুষ্যত্ব বিসর্জ্জন করত। সেইদিন ভারতবর্ষে যথার্থ আপন সজীব বিশ্ববিদ্যালয়ের সৃষ্টি। তার মধ্যে জীবনীশক্তির বেগ যে কত প্রবল তা স্পষ্টই বুঝতে পারি যখন দেখতে পাই সমুদ্রপারে জাভাদ্বীপে সর্ব্বসাধারণের সমস্ত জীবন ব্যাপ্ত করে কী একটি কল্পলোকের সৃষ্টি সে করেচে, এই আর্য্যেতর জাতির চরিত্রে, তার কল্পনায়, তার রূপরচনায় কীরকম সে নিরন্তর সক্রিয়।