মনপ্রাণের উৎকর্ষ
কোনো শস্যের যেখানে সব চেয়ে রকম বেশি, সেটাই তার আদি স্থান।
গমের ফুটকি চিহ্ন বসানো যে ভূচিত্রের কথা বলা হয়েছে, তাতে দেখা গেল ভারতবর্ষের উত্তর-পশ্চিম কোণে আফগানিস্থানের এলাকায়, যত রকম ফুটকির ভারি ঠাসাঠাসি। নকশার উপর অন্য যেদিকেই লাইন টানা যায়, তা ধরে চললে ফুটকির রকম কমতে থাকে, দুরে মাত্র দু’এক রকমে গিয়ে ঠেকে। বোঝা গেল কোথায় গমের আদি স্থান,—সব রকম গমের বীজ যোগাড় করতে হলে যেতে হবে সেই আফগানিস্থানে।
এই যুক্তি অনুসারে নানা বীজের আদিস্থান বেরল। ১৯২৪ সালে দলে দলে বিজ্ঞানী খানাতল্লাশে রওনা হলেন এক এক বীজের আদিস্থানে। যাঁরা গম আনতে আফগানিস্থানের দিকে বেরলেন, তাঁদের রোজনামায় দেখা যায় কী অদম্য উৎসাহে অশেষ কষ্ট সহ্য করে পাহাড়ের ভিতর দিয়ে দিয়ে তাঁদিকে কেমন করে চলতে হয়েছিল।
তৈরি রাস্তা প্রায় কোথাও পাননি, স্রোতার উপর দিয়ে সাঁকো নাই, অনেকস্থলে পা পাতবারই জায়গা পাওয়া যায় না। হিংস্র জন্তুর কম্তি নেই, মানুষ ডাকাতেরও বাড়াবাড়ি। কাজেই অল্পে অল্পে অতি সাবধানে সন্তর্পণে এগোতে হয়েছিল—কোথাও রামচন্দ্রের মতো তড়বড়ে পাহাড়ী প্রপাতের উপর সেতুবন্ধ করে, কোথাও হনুমানের মতো পাথর থেকে পাথরে লাফিয়ে, কিংবা পাহাড়ের গায়ে ঝুলতে ঝুলতে। মাঝে মাঝে ঘোড়া থেকে নামিয়ে বোঝা নিজে বইতে হয়েছে, কতবার জিনিসপত্র খদে গড়িয়ে পড়েছে; এক এক স্থান এমন দুর্গম যে, আধঘণ্টা অন্তর পরামর্শে বসে তবে এক পাহাড় থেকে পরের পাহাড়ে যাবার উপায় হয়েছে।
৭৪