বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বিষবৃক্ষ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিংশ পরিচ্ছেদ : হীরার ৰেৰ West সেও কুন্দের স্থায় বিছানায় শুইয়া চিন্তা করিতেছিল। যাহা চিন্তা করিতেছিল, তাহ মুখে অবাচ্য—অতি গোপন। 歌 ও হীরে। ছিঃ! ছি! হীরে । মুখখানি ত দেখিতে মন্দ নয়—বয়সও নবীন, তবে হৃদয়মধ্যে এত খলকপট কেন ? কেন ? বিধাতা তাহাকে ফাকি দিল কেন ? বিধাতা তাহাকে ফাকি দিয়াছে, সেও সকলকে ফাকি দিতে চায়। হীরাকে সূৰ্য্যমুখীর আসনে বসাইলে, হীরার কি খলকপট থাকিত ? হীরা বলে, “না।” ইরাকে হীরার আসনে বসাইয়াছে বলিয়াই হীরা, হীরা। লোক বলে, “সকলই তুষ্টের দোষ।” স্থষ্ট বলে, “আমি ভাল মানুষ হইতাম—কিন্তু লোকের দোষে দুষ্ট হইয়াছি।” লোকে বলে, “পাচ কেন সাত হইল না ? পাচ বলে, “আমি সাত হইতাম—কিন্তু দুই আর পাচে সাত— বিধাতা, অথবা বিধাতার সৃষ্ট লোকে যদি আমাকে আর দুই দিত, তা হইলেই আমি সাত হইতাম ।” হীর। তাহাই ভাবিতেছিল । হীরা ভাবিতেছিল—“এখন কি করি ? পরমেশ্বর যদি সুবিধা করিয়া দিয়াছেন, তবে আপনার দোষে সব নষ্ট না হয়। এদিকে যদি কুন্দকে দত্তের বাড়ী ফিরিয়া লইয় যাই, তবে কমল হার দিবে, গৃহিণীও কিছু দিবেন—বাবুকেই কি ছাড়িব । আর যদি এদিকে কুন্দকে দেবেন্দ্র বাবুর হাতে দিই, তা হলে অনেক টাকা নগদ পাই। কিন্তু সে ত প্রাণ থাকিতে পারিব না। আচ্ছ, দেবেন্দ্র কুন্দকে কি এত সুন্দরী দেখেছে ? আমরা গতর খাটিয়ে খাই ; আমরা যদি ভাল খাই, ভাল পরি, পটের বিবির মত ঘরে তোলা থাকি, তা হলে আমরাও অমন হতে পারি। আর এটা মিন্‌মিনে ঘ্যানঘেনে, প্যান্‌পেনে, সে দেবেন্দ্র বাবুর মৰ্ম্ম বুঝিবে কি ? পাক নইলে পদ্মফুল ফুটে না, আর কুন্দ নইলে দেবেন্দ্র বাবুর মনোহরণ হয় না ! তা যার কপালে যা, আমি রাগ করি কেন? রাগ করি কেন ? হাঃ কপাল। আর মনকে চোখ ঠায়ে কি হবে ? ভালবাসার কথা শুনিলে হাসিতাম। বলিতাম, ও সব মুখের কথা, লোকে একটা প্রবাদ আছে মাত্র। এখন আর ত হাসিব না। মনে করিয়াছিলাম, যে ভালবাসে, সে বামুক, আমি ত কখনও কাহাকে ভালবাসিব না। ঠাকুর বল্পে, রহ, তোরে মজা দেখাচ্ছি। শেষে বেগারের দৌলতে গঙ্গাস্নান। পরের চোর ধরতে গিয়ে আপনার প্রাণটা চুরি গেল! কি মুখখানি ! কি গড়ন । কি গলা । অন্ত মানুষের কি এমন আছে ? আবার মিলে আমায় বলে, কুন্দকে এনে দে । আর বলতে লোক পেলেন না ! মারি মিন্সের নাকে এক কিল । আহ, তার নাকে কিল মেরেও মুখ। দূর হোক ও সব কথা যাকৃ। ও পথেও ধর্মের কাটা।

  • f