পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/১৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
১৩৪

বস্ত্র পরিত্যাগ করে নাই; দিবারাত্র হাসান-বিরহে দুঃখিত মনে হা হুতাশে সময় অতিবাহিত করিতেছে। এ সময় তাহাদের হৃদয় পূর্ব্ববৎ সমুৎসাহিত, জন্মভূমি রক্ষায় সুদৃঢ় পণে শত্রু-নিধনে সমুৎসুক ও সমুত্তেজিত হইবে কি না সন্দেহ হইতেছে। কারণ দুঃখিত মনে, দগ্ধীভূত হৃদয়ে কোন প্রকার আশাই স্থায়ীরূপে বদ্ধমূল হয় না। যত দিন তাহারা জীবিত থাকিবে, তত দিন এমামের শোক ভুলিতে পারিবে না। এই শোকসন্তপ্ত হৃদয়ে সেই স্নেহকাতর ভ্রাতৃগণকে মহাযুদ্ধে প্রবৃত্ত করাইব? কিছুদিন যুদ্ধে প্রবৃত্ত না হওয়াই আমার উচিত। আমি যদি কিছু দিনের জন্য মদিনা পরিত্যাগ করি, তাহাতে ক্ষতি কি? এজিদের সৈন্য আজ রাতে রওজা আক্রমণ করিয়া আমার প্রাণবধ করিবে, ইহা বিশ্বাস্যই নহে। এখানে কাহারও দৌরাত্ম্য করিবার ক্ষমতা নাই। শুধু এজিদের সৈন্য কেন; জগতের সমস্ত সৈন্য একত্রিত হইয়া আক্রমণ করিলেও এই পবিত্র রওজায় আমার ভয়ের কোন কারণ নাই; তথাপি, মনে হয়, কিছু দিনের জন্য স্থান পরিত্যাগ করাই সুপরামর্শ। আপাততঃ কুফা নগরে যাইয়া আবদুল্লাহ জেয়াদের নিকট কিছু দিন অবস্থিতি করি। জেয়াদ আমার পরম বন্ধু। আরব দেশে যদি প্রকৃত বন্ধু কেহ থাকে, তবে সেই কুফার অধীশ্বর প্রিয়তম বন্ধুবৎসল জেয়াদ! যদি মদিনা পরিত্যাগ করিয়া যাওয়াই উচিত বিবেচনা হয়, তবে সপরিবারে কিছু দিনের জন্য কুফা নগরে গমন করাই যুক্তিসিদ্ধ। আজ রাত্রের ও-কথা কিছুই নহে।” এইরূপ ভাবিয়া হোসেন পুনরায় ঈশ্বরোপাসনায় মনোনিবেশ করিলেন।

 ওত্‌বে অলীদ এবং মারওয়ান উভয়ে শিবিরে গিয়া বেশ পরিত্যাগ পূর্ব্বক নির্জ্জন স্থানে বসিয়া পরামর্শ করিতেছিলেন। অনেক কথার পর মারওয়ান বলিলেন, “মোহাম্মদের রওজায় হোসেনের মৃত্যু নাই। আমরা এমন কোন উপায় নির্ণয় করিতে পারি নাই যে, তাহাতে নিশ্চয়ই হোসেন রওজা হইতে বহির্গত হইয়া মদিনা পরিত্যাগ করিবেন। এইটি যাহা হইল, ইহাও মন্দ নহে, ইহার উপরে আরও একটি ছিল, কিন্তু সে আমাদের ক্ষমতার অতীত। তদ্বিস্তারিত তথ্য কাসেদ গিয়া মুখে প্রকাশ