পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

মহরম পর্ব্ব

প্রথম প্রবাহ

 “তুমি আমার একমাত্র পুত্র। এই অতুল বিভব, সুবিস্তৃত রাজ্য এবং অসংখ্য সৈন্যসামন্ত সকলই তােমার। দামেস্করাজমুকুট অচিরে তােমারই শিরে শােভা পাইবে। তুমি এই রাজ্যের কোটি কোটি প্রজার অধীশ্বর হইয়া তাহাদিগকে রক্ষণাবেক্ষণ, প্রতিপালন এবং জাতীয় ধর্ম্মের উৎকর্ষ সাধন করিয়া সর্ব্বত্র পূজিত এবং সকলের আদৃত হইবে। বলত, তােমার কিসের অভাব? কি মনস্তাপ? আমি ভাবিয়া কিছুই স্থির করিতে পারিতেছি না। তুমি সর্ব্বদাই মলিনভাবে বিষাদিত চিত্তে বিকৃতমনার ন্যায় অযথা চিন্তায় অযথা স্থানে ভ্রমণ করিয়া দিন দিন ক্ষীণ ও মলিন হইতেছ। সময়ে সময়ে যেন একেবারে বিষাদ-সিন্ধুতে নিমগ্ন হইয়া জগতের সমুদয় আশায় জলাঞ্জলি দিয়া আত্মবিনাশে প্রস্তুত হইতেছ—ইহারই বা কারণ কি? আমি পিতা, আমার নিকট কিছুই গােপন করিও না। মনের কথা অপকটে প্রকাশ কর। যদি অর্থের আবশ্যক হইয়া থাকে, ধনভাণ্ডার কাহার জন্য? যদি রাজসিংহাসনে উপবেশন করিয়া রাজ্যভার স্বহস্তে গ্রহণ করিবার বাসনা হইয়া থাকে—বল, আমি এই মুহূর্ত্তে তােমাকে মহামূল্য রাজবেশে সুসজ্জিত করাইয়া রাজমুকুট তােমার শিরে অর্পণ করাইতেছি—এখনই তােমাকে সিংহাসনে উপবেশন করাইতেছি। আমি স্বচক্ষে তােমাকে রাজকার্য্যে নিয়ােজিত দেখিয়া নশ্বর বিশ্ব-সংসার পরিত্যাগ করিতে পারিলে তাহা অপেক্ষা ঐহিকের সুখ আর কি আছে? তুমি আমার একমাত্র পুত্ররত্ন। অধিক আর কি বলিব—তুমি আমার অন্ধের যষ্টি, নয়নের