পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৩
মহরম পর্ব্ব—তৃতীয় প্রবাহ

 আবদুল জব্বারের এই সংবাদ শ্রবণে প্রতিবেশীরা সকলেই অশ্চর্য্যান্বিত হইলেন। আবদুল জব্বারের মহাসৌভাগ্য! সকলেই শাহী-নামা মহামান্য মস্তকোপরি রাখিয়া দামেস্ক-সিংহাসনের গৌরবরক্ষা করিলেন। সকলেই একবাক্যে আবদুল জব্বারের গুণানুবাদ করিয়া কহিলেন, “আবদুল জব্বারের কপাল ফিরিল”; সমবয়সীরা বলিতে লাগিল, “ভাই, তুমি ত ভাগ্যগুণে বাদশাহের নিকট পরিচিত হইলে, সম্মানের সহিত রাজদরবারেও আহূত হইলে; আমাদের কথা মনে রাখিও।”

 আবদুল জব্বার ব্যতিব্যস্ত হইয়া রাজধানী গমনে উদ্যোগী হইলেন। আত্মীয়স্বজন এবং সাধারণ প্রতিবেশিগণের নিকট ও জয়নাবের সমক্ষে তিনি বিনম্রভাবে বিদায় গ্রহণ করিলেন। শাহী দরবারে গমনোপযোগী যে সকল বসন তাঁহার ছিল, তৎসমস্ত সংগ্রহ করিয়া বাহক-বাহন-সমভিব্যাহারে দামেস্কনগরাভিমুখে গমনার্থ তিনি প্রস্তুত হইলেন। প্রতিবেশিবর্গ সহাস্যবদনে তাঁহার প্রশংসাগান কীর্ত্তন করিতে করিতে স্ব-স্ব আবাসে চলিয়া গেলেন। জয়নাবের চক্ষু দুইটি বাষ্পসলিলে পরিপূর্ণ হইল। মনের উল্লাসে আবদুল জব্বার তৎকালে এতদূর বিহ্বল হইলেন যে, যাত্রাকালে প্রিয়তমা জয়নাবকে একটি মনের কথাও বলিয়া যাইতে মনে হইল না; সামান্যতঃ বিদায় গ্রহণ করিয়াই ত্বরিত গতিতে রাজদর্শনে যাত্রা করিলেন। পদমর্য্যাদার এমনই কুহক!

তৃতীয় প্রবাহ

 এজিদের শিরায় শিরায়, শোণিতবিন্দুর প্রতি পরমাণু-অংশে, প্রতি শ্বাসপ্রশ্বাসে, শয়নে, স্বপ্নে, জয়নাব-লাভের চিন্তা অন্তরে অবিরতভাবে রহিয়াছে। কিন্তু সে চিন্তার উপরেও আর একটি চিন্তা মস্তিষ্কমধ্যে ঘুরিতেছে। এক সময়ে এক মনে দুই প্রকারের চিন্তা অসম্ভব। কিন্তু মূলকার্য্যের কৃতকার্য্যতা-লাভের আশায় অন্য একটি চিন্তা বা কল্পনাকে আশ্রয় করিয়া কার্য্যক্ষেত্রে অবতীর্ণ না হওয়া যায়, এরূপ নহে। প্রথম চিন্তায় কৃতকার্য্য হইবার আশাতেই বাহ্যিক চিন্তাই প্রবল হইয়া উঠে। চিন্তার আধার মস্তক, কিন্তু