পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
১২

করিয়া বাবসায়ের হিসাবপত্রাদি লইতে তিনি ব্যতিব্যস্ত হইলেন ও যেখানে বাহা রাখিয়াছেন, একে একে সংগ্রহ করিলেন। ব্যবসায়ের সাহায্যকারী অথচ নিকট আত্মীয় ওস্‌মানের নাম করিয়া মনে মনে বলিতে লাগিলেন, “এখনও আসিল না। আজ অনেক অসুবিধা হইবে। আর কতক্ষণ বিলম্ব করিব?”—এই কথা বলিয়াই বাটী হইতে যাত্রা করিবেন, এমন সময়ে ওস্‌মান অতি ব্যস্তভাবে আসিয়া বলিলেন, “আবদুল জব্বা‌র! দামেস্ক হইতে একজন কাসেদ আসিয়াছে—অত্যন্ত ব্যস্ত, অতিশয় পরিশ্রান্ত, অতিশয় ক্লান্ত। সেই লোক তােমাকেই অম্বেষণ করিতেছে, তােমার বাসস্থানের অনুসন্ধান না পাইয়া অনেক ঘুরিয়াছে। শুনিলাম, তাহার নিকট দামেস্কাধিপতির আদেশপত্র আছে।”

 ওস্‌মানের মুখে এই কথা শুনিয়া আবদুল জব্বার শশব্যস্তে বাটীর বাহিরে আসিলেন। কাসেদ ঈশ্বরের গুণানুবাদ করিয়া দামেস্কাধিপতির বন্দনার পর অতি বিনীতভাবে আবদুল জব্বারের হস্তে শাহী-নামা প্রদান করিলেন।

 আবদুল জব্বার শত শত বার সেই শাহী-নামা চুম্বন ও মন্তকোপরি ধারণ করিয়া কাসেদের যথাযোগ্য অভ্যর্থনা করিলেন। অনন্তর তিনি শাহীনামহস্তেই অন্তঃপুর-মধ্যে প্রবিষ্ট হইলেন; তথায় উপস্থিত হইয়া বিশেষ ভক্তিসহকারে শাহী-নামাখানি পাঠ করিলেন। তাহাতে লিখিত আছে,

 “সম্ভ্রান্ত আবদুল জব্বার!

 তােমাকে জানান যাইতেছে যে, দামেস্কাধিপতি তােমার সহিত সাক্ষাৎ করিবার মানসে তোমাকে স্মরণ করিয়াছেন। অবিলম্বে রাজধানীতে উপস্থিত হইয়া রাজপ্রসাদলাভে সৌভাগ্য জ্ঞান কর।

প্রধান উজীর— মারওয়ান।”

 আবদুল জব্বার এতৎ পাঠে মহাসৌভাগ্য জ্ঞান করিয়া জয়নাবকে কহিলেন, “আমি এখনই দামেস্কযাত্রা করিব। আমি এমন কি পুণ্য কার্য্য করিয়াছি যে, স্বয়ং বাদশাহ্ আমার সহিত সাক্ষাৎ করিতে ইচ্ছা করিয়াছেন! ঈশ্বর জানেন, ভবিষ্যতে কি আছে!”