পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৩৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩২৯
উদ্ধার পর্ব্ব—পঞ্চদশ প্রবাহ

ধার, তীরের লক্ষ্য, খঞ্জরের হাত, গদার আঘাত,—সকলই দেখিব। ভয় কি? শত্রু যুদ্ধপ্রার্থী,—তুমি শিবিরে? ছিঃ ছিঃ! বড় ঘৃণার কথা। ছিঃ ছিঃ। অলীদ! তুমি না সেনাপতি?—এজিদের বিশ্বাসী সেনাপতি?

 মস্‌হাব কাক্কা অলীদকে ধিক্কার দিয়া, তাহার উপর ঘৃণা জন্মাইয়া তাহাকে যুদ্ধে আহ্বান করিতেছেন; কিন্তু অলীদ গুপ্তভাবে থাকিয়া কি দেখিতেছে, কি চিন্তা করিতেছে, তাহা সেই-ই জানে। তাহার সৈন্যগণের হাবভাবে তাহাকে আরও ব্যতিব্যস্ত হইতে হইল; চতুর্দ্দিকে ভীষণ বিভীষিকাময় মুর্ত্তি সে দেখিতে লাগিল। যুদ্ধে পরাস্ত হইতে হইবে, মদিনার পথ ছাড়িয়া দিতে হইবে, এখনই ছাড়িয়া দিতে হইবে,—না হয় বন্দীভাবে হানিফার পদানত হইতে হইবে, ইহাতে দুঃখ নাই,অপমানের কথা নাই। কিন্তু আপন সৈন্য দ্বারা অপমানিত হওয়া বড়ই ঘৃণার কথা এবং লজ্জার কারণ মনে করিয়া, অলীদ বাধ্য হইয়া সশস্ত্র মস্‌হাব কাক্কার সম্মুখীন হইল।

 মস্‌হাব কাক্কা বলিলেন, “অলীদ! শত্রুসম্মুখে আসিতে, যুদ্ধার্থে রণক্ষেত্রে পদবিক্ষেপ করিতে, তোমার আমার কি এত বিলম্ব শোভা পায়? যাহা হউক, আইস, অগ্রে তোমার বাহুবল পরীক্ষা করি। আমি তোমাকে অস্ত্রাঘাতে মারিব না—নিশ্চয় বলিতেছি, তোমার প্রতি মস্‌হাব কাক্কা কখনই অস্ত্র নিক্ষেপ করিবে না।”

 অলীদ চক্ষু দুইটি পাকাইয়া বলিল, “মহাবীরের দর্প দেখ, অস্ত্রাঘাতে মারিবেন না, কথার আঘাতে মারিবেন।”

 “আরে পামর! কথা রাখ, অস্ত্র ধর।”

 “মস্‌হাব? তুমি এইমাত্র আসিয়াছ—এখনই যুদ্ধ? কে না বলিবে—যে দেখিবে সেই-ই বলিবে, যে শুনিবে সেই-ই বলিবে যে, মস হাব দুর্গম পথশ্রান্তিতে কাতর ছিল, ক্ষণকালও বিশ্রাম করে নাই, যেমনই দেখা অমনই যুদ্ধ—কাজেই পরাস্ত। তাই আমার বিলম্বের কারণ। কিন্তু তুমি তাহা বুঝিলে না— তোমার মঙ্গলের জন্যই আমি এতক্ষণ আসি নাই।”

 মস্‌হাব কাক্কা রোষে অধীর হইয়া সিংহনাদে অলীদের দুই হস্ত নিজের দুই হস্তে ধরিয়া সজোরে তাহার অশ্বকে পদাঘাত করিলেন, অশ্ব বহু দূরে ছিট্‌কাইয়া