পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৩৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
৩৩০

পড়িল। অলীদ কাক্কার হস্তে রহিয়া গেল। মস্‌হাব অলীদকে লইয়া এক লম্ফে অশ্ব হইতে অবতরণ করিয়া মৃত্তিকায় দণ্ডায়মান হইলেন। বীর অলীদ যথাসাধ্য চেষ্টা করিয়াও কাক্কার হস্ত হইতে হস্ত ছাড়াইতে পারিল না।

 মস্‌হাব বলিলেন, “এই ত প্রথম পরীক্ষা; দ্বিতীয় পরীক্ষাও দেখ্।”

 এই কথা বলিয়াই অলীদকে শূন্যে উঠাইয়া তিনি বলিতে লাগিলেন, “দেখ কাফের দেখ্, কাহার কথা সত্য,—আমি কথার আঘাতে পারি, কি আছাড় মারিয়া মারিতে পারি?” চতুর্দ্দিক হইতে তখন মহাগোলযােগ হইয়া উঠিল। সৈন্যাধক্ষের প্রাণ যায়, দামেস্করাজ এজিদের সেনাপতি শূন্যে চক্রাকারে ঘুরিতে ঘুরিতে প্রাণ হারায়—বড়ই লজ্জার কথা! অলীদ-সৈন্য় মস্‌হাবের দিকে ‘মার্ মার্’ শব্দে মহারােষে অসি নিষ্কোষিত করিয়া আসিতে লাগিল। এদিকে মােহাম্মদ হানিফা ঐ গােলযােগের কারণ জানিতে আসিয়া দেখিলেন: অলীদ কাক্কার হস্তে উত্তোলিত হইয়া চক্রাকারে ঘুরিতেছে, তাহার আর রক্ষা নাই।

 মােহাম্মদ হানিফা উচ্চৈঃস্বরে বলিতে লাগিলেন, “ভাই মস্‌হাব, আমার কথা রাখ। ভাই, আমার দিকে একবার চাহিয়া দেখ, কথা রাখ। ভাই, ক্ষান্ত হও, অলীদকে প্রাণে মারিও না। মারিও না!! আমি বারণ করিতেছি, উহাকে প্রাণে মারিও না।”

 মস্‌হাব বলিলেন, “আপনার আজ্ঞা শিরােধার্য্য; কিন্তু আমি ইহাকে একটি আছাড় না মারিয়া ছাড়িব না,—তাহাতেই যদি উহার প্রাণ দেহপিঞ্জরে আর না থাকে, কি করিব? উহার প্রতি আমি অস্ত্রের আঘাত করিব না, এ কথা পূর্ব্বেই বলিয়াছি। এজিদের সেনাপতির বীরত্ব দেখুন, বাহুবল দেখুন!”

 এই কথা বলিয়াই মস্‌হাব কাক্কা অলীদকে সজোরে বহুদূর শূন্য হইতে মাটিতে ফেলিয়া দিলেন। অলীদ চতুর্দ্দিকে অন্ধকার দেখিতে দেখিতে বিংশতি হস্ত ব্যবধানে ছুটিয়া ছিট্‌কাইয়া পড়িল। সে ক্ষণকাল অচেতন হইয়া জগৎ অন্ধকার দেখিল। একটু চমক ভাঙ্গিলেই দক্ষিণে, বামে, পশ্চাতে চাহিয়াই উঠিতে উঠিতে পড়িতে পড়িতে রণ-প্রাঙ্গণ হইতে সভয়ে ফিরিয়া