পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৩৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
৩৭৬

কি? আজ ওমর আলী—কাল শুনিব যে, মোহাম্মদ হানিফার জীবন শেষ। আর আশা কি? জগদীশ, তোমার মনে ইহাই ছিল!— তোমার মনে ইহাই ছিল!!”

 সালেমা বিবি বলিলেন, “শাহ্‌রেবানু, এ কি কথা? ঈশ্বরের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর। সেই নির্ব্বিকার নিরাকার দয়াময়কে কোন প্রকারে দোষী করিও না,—মহাপাপ! মহাপাপ!! তিনি জীবের ভালর জন্যই আছেন, অজ্ঞ লোকের শিক্ষার জন্য অনেক সময় অনেক লীলা দেখাইয়া থাকেন। সেই করুণাময় ভগবান কৌশলে দেখাইয়া দেন যে, ক্ষুদ্রবুদ্ধি মানব ক্ষমতাশালী হইলেও তাঁহার ক্ষমতার নিকট সে অতি ক্ষুদ্র ও তুচ্ছ। আমাদের স্বভাবই এই যে, কোন মানুষের অলৌকিক ক্ষমতা দেখিলেই আমরা সেই সর্ব্বশক্তিমান্‌ ভগবানের কথা একেবারেই ভুলিয়া যাই। কিন্তু সেই মহাশক্তি প্রভাবে, মানবের অন্তরের মুঢ়তা ও মুর্খতা দূর করিতে সেই অলৌকিক ক্ষমতাশালী মানব প্রতি এমন কোন বিপদ্‌জালের বিস্তার হয় যে, তাহার সে অলৌকিক ক্ষমতা ও শক্তি যে, কোথায়—কোন্ পথে—কিসে মিশিয়া যায়, তাহার আর সন্ধান পাওয়া যায় না। সেই অনন্ত শক্তিসম্পন্ন মহাপ্রভুর ক্ষমতা অসীম। তিনিই সর্ব্বমূল, তিনিই বিপদের কাণ্ডারী,বিপদ-সাগর হইতে উদ্ধার হইবার একমাত্র তরী। মানুষের ক্ষমতা কি? ওমর আলীর সাধ্য কি? হানিফার শক্তি কি? সেই বিপদতারণ ভগবানের কৃপা না হইলে, দয়াময়ের দয়া না হইলে, কোন প্রাণী কাহাকেও বিপদ-সাগর হইতে উদ্ধার করিতে পারে? তিনিই রক্ষাকর্ত্তা, তিনিই সর্ব্ববিজয়, সর্ব্বরক্ষক বিধাতা! শাহ রেবানু স্থির হও—হৃদয়ে বল সঞ্চয় কর। সেই অদ্বিতীয় ভগবানের প্রতি একমনে নির্ভর কর। দুঃখে পড়িয়া সামান্য লোকের ন্যায় বিহ্বল হইও না। বলহীন হৃদয়ের ন্যায় ব্যাকুল হইও না। তাঁহার নামে কলঙ্ক রটাইও না। তিনি তাঁহার সৃষ্ট জীবের মন্দ-চিন্তা কখনই করেন না। সাবধান!—শাহ্‌রেবানু, সাবধান!! মনের মলিনতা দূর কর। তিনি অবশ্যই মঙ্গল করিবেন। তিনি সর্ব্বমঙ্গলময় অদ্বিতীয় ঈশ্বর।”

 “এত বিপদ মানুষের অদৃষ্টে ঘটে! সকলই ত ঈশ্বরের কার্য্য।