পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৩৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৭৭
উদ্ধার পর্ব্ব—চতুর্ব্বিংশ প্রবাহ

আমরা কি অপরাধে অপরাধী? কি পাপ করিয়াছি যে, তাহার জন্য এই প্রতিফল?”

 “ও কথা মুখে আনিও না,—বিপদ, ব্যাধি, জরা জগতে নূতন নহে। নূরনবী হজরত মোহাম্মদ মোস্তফার পরিজন হইলেই যে, ইহজগতে বিপদগ্রস্ত হইতে হইবে না, এ কথা কখনই অন্তরে স্থান দিও না। ঈশ্বর মহান, তাঁহার শক্তি মহান। কত নবী, কত অলী, কত দরবেশ, তিনি সৃষ্টি করিয়াছেন। কত শত সহস্র মহাপুরুষ, যোগী, ঋষি এই ভবে জন্মিয়া গিয়াছেন! কত ভক্তের মন পরীক্ষার জন্য তিনি কত কি করিয়াছেন। তুমি জানিয়া শুনিয়া আজ সেই সকল ভুলিয়া যাইতেছ? ছিঃ! ছিঃ! ঈশ্বরে নির্ভর কর। তুমি কি সকলই ভুলিয়া গিয়াছ? হজরত আদমকেও বেহেশ্‌তের চির-সুখশান্তি পরিত্যাগ করিয়া চির-সন্তাপহারিণী নয়নের মণি, পরম প্রিয়তমা, প্রাণের প্রাণ, অর্ধাঙ্গিনী, সহধর্ম্মিণী বিবি হাওয়ার সহিত বিচ্ছেদে এক নয়, দুই নয়, ৪০ বৎসরকাল সজল নয়নে দেশদেশান্তরে, পর্ব্বতে, বিজনে, প্রান্তরে মহাকষ্টে ভ্রমণ করিতে হইয়াছিল। হজরত ইব্রাহিমকেও গগনস্পর্শী অগ্নিশিখা মধ্যে প্রবেশ করিতে হইয়াছিল। হজরত নূহ্ পয়গম্বরকেও জলে ভাসিতে হইয়াছিল। হজরত আইউবকেও মহাব্যাধিগ্রস্ত হইয়া মহাকষ্ট পাইতে হইয়াছিল। হজরত ইউসুফকেও অন্ধকূপে ডুবিতে হইয়াছিল। হজরত ইউনুস্‌কেও মৎস্যের উদরে প্রবেশ করিতে হইয়াছিল। হজরত জাক্‌রিয়াকেও করাতে দ্বিখণ্ডিত হইতে হইয়াছিল। হজরত মুসাকেও প্রাণভয়ে দেশত্যাগী হইতে হইয়াছিল। ঈসাইদিগের মতে হজরত ঈসাকেও শূলে আরোহণ করিয়া প্রাণবিসর্জ্জন করিতে হইয়াছিল। আমাদের হজরত মোহাম্মদ কি কম বিপদে পড়িয়াছিলেন। প্রাণভয়ে তাঁহাকে জন্মভূমি মক্কা নগর পরিত্যাগ করিয়া গুপ্তভাবে মদিনা যাইতে হইয়াছিল। ইঁহারা কি বিপদকালে ঈশ্বরের নাম ভুলিয়াছিলেন? নূরনবী মোহাম্মদের কথা একবার মনে কর। ঈশ্বরের আদেশে তিনি কি না করিয়াছেন? রাজাধিরাজ সাদ্দাদ, নমরূদ, ফেরাউন, কারুণ—ইঁহাদের অবস্থাও একবার ভাবিয়া দেখ। ধন-বল, রাজ্য-বল, বাহু-বল প্রভৃতি সম্পূর্ণভাবে থাকা সত্ত্বেও তাঁহারা কত বিপদ্‌গ্রস্ত