পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৪০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৮৫
উদ্ধার পর্ব্ব—পঞ্চবিংশ প্রবাহ

না। প্রকাশ্য স্থানে, যাহাতে সর্ব্বসাধারণে দেখিতে পারে এবং বিপক্ষগণও দেখিতে পারে, এমন স্থানে শূলে চড়াইয়া এখনই ইহার প্রাণবধ কর। কার্য্যশেষে আমায় সংবাদ দিও।”

 ওমর আলী বলিলেন, “কার্য্য শেষ হইলে তোমাকে আর সংবাদ শুনিতে হইবে না। তোমারই সংবাদ অনেকে শুনিবে।”

 মহাক্রোধে এজিদ বলিলেন, “আর সহ্য হয় না। মারওয়ান! শীঘ্র ইহাকে শূলে চড়াও।” মারওয়ান নতশিরে সম্ভাষণ করিয়া বন্দীসহ দরবার গৃহ হইতে বহির্গত হইল।

 শিবিরের বাহিরে লোকে লোকারণ্য। নির্দ্দিষ্ট বধ্যভূমিতে বন্দীসহ গমন করা বড়ই কঠিন। মারওয়ান শিবির-দ্বারে দণ্ডায়মান হইয়া চিন্তা করিতে লাগিল: দর্শকগণের মনে যেন কোন প্রকার কষ্ট না হয়, এদিকে রাজাও যেন প্রতিপালিত হয়। আবার ওদিকে শত্রুপক্ষ অতি নিকট। তাহারাই বা কখন কি কাণ্ড করিয়া বসে, তাহারই বা নিশ্চয়তা কি? প্রকাশ্য স্থানে শূলে চড়াইয়া প্রাণবধ করিতে হইবে,—এ কথাও তাহারা শুনিয়াছে। শূলদণ্ড যে দণ্ডায়মান রহিয়াছে, তাহাও তাহারা স্পষ্টভাবেই দেখিতেছে। ইহাতে যে তাহারা একেবারে নিশ্চিন্ত থাকিবে, নিঃশব্দে দণ্ডায়মান হইয়া ওমর আলীর বধ-ক্রিয়া স্বচক্ষে দেখিবে,—ইহা ত কখনই বিশ্বাস হয় না। হয় ত কোন নূতন কাণ্ড করিয়া বসিবে!

 মারওয়ান বিশেষ চিন্তা করিয়া আদেশ করিল, “বধ্যভূমি পর্য্যন্ত যাইবার সুপ্রশস্ত পথের উভয় পার্শ্বে সৈন্যশ্রেণী দণ্ডায়মান থাকিবে। প্রহরী ও প্রধান প্রধান সৈন্যাধ্যক্ষ ব্যতীত সাধারণ সৈন্য, কি কোন প্রাণী, আমার বিনানুমতিতে এ পথে বধ্যভূমিতে যাইতে পারিবে না।”

 আদেশমাত্র নিষ্কোষিত অসিহস্তে সৈন্যগণ গায় গায় মিশিয়া বধ্যভূমি পর্য্যন্ত গমনোপযোগী প্রশস্ত স্থান রাখিয়া দুই শ্রেণীতে পরস্পর সম্মুখে দণ্ডায়মান হইল। তখন শিবির-দ্বার হইতে শূলদণ্ডের সমগ্রভাগ স্পষ্টভাবে দেখা যাইতে লাগিল। মারওয়ান পুনরায় আজ্ঞা করিল, “শূলদণ্ডের চতুষ্পার্শ্বে চক্রাকারে কতক স্থান রাখিয়া শূলদণ্ডসহ ঐ চক্রাকার স্থান